Image default
বাংলাদেশ

এক গ্রামে বিক্রি হয় মাসে ১০ কোটি টাকার ফার্নিচার 

গ্রামের প্রতিটি বাড়ি যেন ছোটখাটো একেকটি কারখানা। এসব কারখানায় কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র। এ কারণেই কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী সদরের চরিয়াকোনা গ্রামটি বহু বছর ধরে ফার্নিচার গ্রাম নামে পরিচিত। প্রায় ৫০০ পরিবার এই পেশায় জড়িত। ফার্নিচার কেনাবেচা বাবদ মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেন হয় চরিয়াকোনা গ্রামে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি কর্মমুখর থাকে পুরো গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে গেলেই শোনা যাবে কাঠের খটখট শব্দ। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ জোড়া দিচ্ছেন, কেউবা এগুলোতে ফুটিয়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন নকশা। কোথাও আবার চলছে বার্নিশের কাজ। কটিয়াদী উপজেলা সদরের চরিয়াকোনা গ্রামের প্রতিদিনের চিত্র এটি। ঘরের গৃহিণী থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া শিশুটি পর্যন্ত পারদর্শী এসব কাজে। এই পেশায় স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকের ভাগ্যবদল হয়েছে।

ফার্নিচার কারিগর মো. নাসির মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই পেশায় জড়িত ছিলেন। এখন আমরাও এই কাজ করি। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা এখানে এসে ফার্নিচার অর্ডার করেন। আমাদের কাছ থেকে সাশ্রয়ী দামে এসব ফার্নিচার কিনে নিয়ে বড় বড় শহরে বড় বড় দোকানে বিক্রি করেন। সারাদেশের বিভিন্ন মেলায় এসব ফার্নিচার বিক্রি হয়। করোনা বাড়ার কারণে মেলার জন্য বায়না করা অর্ডারগুলো এখন পাইকাররা বাতিল করে দিচ্ছেন। করোনা আসার আগ পর্যন্ত আমরা ভালোই ছিলাম।

কম দামে ভালো মানের ফার্নিচার তৈরি হয় এখানে। এগুলোর চাহিদাও বেশি। তাই দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা ভিড় করেন চরিয়াকোনা গ্রামে। খাট-সোফা, চেয়ার-টেবিল ও আলনা থেকে শুরু করে সব ধরনের ফার্নিচার বানান এই গ্রামের কারিগররা। এই জেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসব ফার্নিচারের ক্রেতা। চাহিদামতো অর্ডার দিয়ে এগুলো বানিয়ে নিয়ে যান তারা। প্রতিটি পরিবার মাসে কম করে হলেও তিন লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি করেন। সবমিলিয়ে মাসে ১০ কোটি টাকার ফার্নিচার কেনাবেচা হয়।

পাইকাররা বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় ফার্নিচার বিক্রি করেন। তবে করোনার কারণে মেলা বন্ধ থাকায় বর্তমানে বেকায়দায় রয়েছেন কারিগররা। অনেক পাইকার কাজের অর্ডার দিয়েও বাতিল করেছেন। লকডাউনের সময়ে কাজ না থাকায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাদের। পাশাপাশি পূঁজির অভাবও প্রকট। এনজিওর ঋণে তেমন সুবিধা হয় না, ব্যাংকগুলোও তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না বলে অভিযোগ তাদের।

এই পেশায় যুক্ত গোলাপ মিয়া বলেন, করোনা আমাদের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। এতগুলো পরিবার যুগ যুগ ধরে এই কাজটাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছেন। করোনার কারণে এখন এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছি। সরকার সুদ ছাড়া আমাদের যদি ঋণের সুযোগ করে দিতো অনেক ভালো থাকতাম।

প্রতিটি পরিবার মাসে কমপক্ষে তিন লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি করেন ফার্নিচারের কারিগর দয়াল মিয়া বলেন, এই কাজ করে গ্রামের কয়েকশ পরিবারের জীবন-জীবিকা চলছে। এই পেশা ছাড়া গ্রামের মানুষ অন্য পেশায় যায় না। করোনায় ব্যবসা এই ভালো এই খারাপ। কয়েক মাস ভালো যায়, আবার করোনা বাড়লেই পূঁজি ভেঙে আমাদের খেতে হয়। এ ধরনের সমস্যায় আমাদের আগে পড়তে হয়নি। আমাদের কাজের সারাদেশে সুনাম আছে।

তবে ফার্নিচার গ্রামের কারিগরদের সহযোগিতা ও তাদের সমস্যাগুলো সমাধানে প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতিশ্বর পাল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বংশ পরম্পরায় এতগুলো পরিবার এই পেশায় জড়িত। পুরো গ্রামটিকে একটি কারখানা মনে হয়। বর্তমানে করোনার জন্য তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারের কাছ থেকে তারা যেন সার্বিক সহযোগিতা পায় এ বিষয়ে আমি চেষ্টা করবো।

 

Source link

Related posts

দাঁড়িয়ে থাকা মিনিট্রাকে ধাক্কা, প্রাণ গেলো পিকাআপভ্যান চালকের 

News Desk

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

News Desk

মরে যাচ্ছে আলু গাছ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

News Desk

Leave a Comment