শীত এখনও জেঁকে না বসলেও অতিথি পাখির কোলাহলে মুখর হয়ে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। সাইবেরিয়াসহ ইউরোপের শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে আসা পাখির জন্য জলাশয়গুলো হয়ে উঠেছে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। একটু উষ্ণতার খোঁজে বরাবরের মতো এবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগমন ঘটেছে পরিযায়ী পাখির। যেন শীতের আগমনী বার্তা নিয়েই এসেছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই ধরনের পরিযায়ী পাখি দেখা যায় রাবি ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি থাকে ডাঙায় বা ডালে; আরেকটি পানিতে। তবে রাবির জলাশয়গুলোতে আসা বেশির ভাগ পাখিই হাঁসজাতীয়। এদের মধ্যে বেশি সংখ্যক পাখিই ছোট সরালি। আর বাকিদের মধ্যে রয়েছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি।
ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে প্রতিবছরে একবার দেখা মেলে তাদের। প্রতিবারের মতো এবারও ক্যাম্পাসে দেখা মিলছে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। ক্যাম্পাস এখন যেন পাখির রাজ্য।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া, তাপসী রাবেয়া, রহমতুন্নেছা হলের পেছনের পুকুর, রোকেয়া হলের পাশের পুকুরগুলো, শামসুজ্জোহা হলের পাশের পুকুরসহ বেশ কয়েকটি জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির মেলা। কিছু পাখি ডুবসাঁতার খেলছে, কিছু উড়ে যাচ্ছে আকাশে। এই ডাল থেকে ওই ডাল ঘুরে আবার নেমে আসছে পানিতে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। সবমিলিয়ে যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির মেলা বসেছে।
পুরো শীতজুড়েই থাকবে পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাখি দেখে আনন্দিত। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেক দর্শনার্থী আসছেন পাখি দেখতে।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর শীতের মৌসুমে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে।
এ সময় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসে দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশেও। দেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উঁচু উঁচু গাছপালা, বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্ত জলাশয় ও পর্যাপ্ত খাদ্য থাকায় প্রতিবছর শীতের মৌসুমে পরিযায়ী পাখিরা এ ক্যাম্পাসকে বেছে নেয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র হওয়ায় তারা এখানে বাসাও বাঁধে। প্রতি বছর এদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এবারও ক্যাম্পাসের রোকেয়া হলের পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির দেখা মিলছে। পরিযায়ী পাখিরা কখনও দিক ভুল করে না। যেখান থেকে তারা আসে ঠিক সেখানেই আবার ফিরে যায়। এ ক্ষেত্রে তারা পাহাড়-পর্বতকে দিকনির্দেশনা হিসেবে মনে রাখে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পাখি মারা নিষেধ আছে। পাখিদের কোনও ধরনের ভয়-ভীতি দেখানো হয় না। পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণে যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য তৎপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

