দৃষ্টিহীনতা বাধা হতে পারেনি অদম্য মেধাবী ঐতির
বাংলাদেশ

দৃষ্টিহীনতা বাধা হতে পারেনি অদম্য মেধাবী ঐতির

সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আলোকিত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে ঐতি রায় (১৫)। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফল করেছে। মায়ের শ্রুতিলিখন ও পঠনের সহায়তায় পড়াশোনা এবং একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯ পেয়ে ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে ঐতি।

সোমবার (১৩ মে) সরেজমিন মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকার বাড়িতে কথা হয় ঐতির বাবা অনুপম রায়ের সঙ্গে। আবেগাপ্লুত হয়ে অনুপম বলেন, ‘জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন মেয়ে এই রেজাল্ট করবে ভাবতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে তার পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিল। আমরা তাকে যত্ন করে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই।’

তিনি জানান, একমাত্র মেয়েকে তার মা শংকরি রায় প্রথমে শ্রুতিলিখনের মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখান। এভাবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি মুখস্থ বলতো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখতো। এভাবে সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

ঐতির মা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ঐতির পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভালোভাবে পাস করেছে। আমরা ভীষণ খুশি, স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

মেয়েকে অনেকদূর পড়াশোনা করাতে চান ঐতির মা-বাবা। তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। এজন্য তারা সরকারের সহযোগিতা চান।

এ বিষয়ে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, ‘দৃষ্টিহীন ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। এ ছাড়া সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করা ঐতি রায় বলেন, ‘জন্ম থেকে আমি দৃষ্টিহীন। কিন্তু পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। সেই অদম্য ইচ্ছে থেকেই আমার এই সফলতা। পড়াশোনার কাজে আমার মা আমাকে সহযোগিতা না করলে আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। মা পাশে বসে রিডিং পড়তো, আমি সেটা মুখস্থ করতাম। এভাবেই লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি।’ পড়াশোনা শেষ করে সরকারি একটা চাকরি এবং আবৃত্তির শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের কথাও জানায় ঐতি।

Source link

Related posts

তোপের মুখে অফিস ছাড়লেন ইউএনও

News Desk

পাহাড়ে ১৩০ চুল্লিতে গাছ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি, হুমকিতে পরিবেশ

News Desk

সিলেটে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ৫ পুলিশ আহত, আটক ৮ বিএনপি নেতাকর্মী

News Desk

Leave a Comment