গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
বাংলাদেশ

গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে

টানা কয়েক দিনের গরমে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড়েছে রোগী সংখ্যা। বিভাগের প্রধান সরকারি এই হাসপাতালে ধারণক্ষমতার তিন গুণের বেশি রোগী ভর্তি আছেন। শয্যা খালি না থাকায় সিঁড়িতে রেখেই রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও এখন জায়গা নেই। গরমে ডায়রিয়া, ভাইরাস জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। তাদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক হাজার শয্যার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি তিন গুণের বেশি। শয্যাসংকটের কারণে প্রতিদিন হাজারো রোগীকে মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক ও নার্সরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

রোগী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, ওয়ার্ড, মেঝে, বারান্দা তো দূরে থাক; এখন সিঁড়ির কোণেও ঠাঁই মিলছে না রোগীদের। ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় সিঁড়িতে গরমে হাঁসফাঁস করছেন রোগীরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকালে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, এক হাজার শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন তিন হাজার ১৮০ জন। এর মধ্যে মেডিসিন বিভাগে ১৭০ শয্যার বিপরীতে ৮৮৬, সার্জারি বিভাগে ১৫০ শয্যার বিপরীতে ৪৬১, অর্থোপেডিক বিভাগে ৬৫ শয্যার বিপরীতে ২২০, শিশু বিভাগে ৬০ শয্যার বিপরীতে ৩৭৪, গাইনি বিভাগে ১২০ শয্যার বিপরীতে ২৮০, করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ৫০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১৬৪ রোগী। শিশু বিভাগে ভর্তি হওয়া বেশিরভাগ ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দিকাশিসহ শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তাদের সঙ্গে রয়েছেন স্বজনরা।

বুক জ্বালাপোড়া এবং প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে বুধবার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুই নম্বর ইউনিটে ভর্তি হন সদরের সিত্তা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে কাউসার মিয়া (১৮)। ওয়ার্ড তো দূরের কথা মেঝে ও বারান্দায় জায়গা না পেয়ে সিঁড়ির কোণে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।

হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি জানিয়ে কাউসার মিয়া বলেন, ‘জ্বালাপোড়া এবং বুকে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে বুধবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। রোগীর চাপ থাকায় ওয়ার্ড, মেঝে এমনকি বারান্দাতেও জায়গা পাইনি। পরে সিঁড়ির কোণে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। ওয়ার্ড থেকে অনেক দূরে হওয়ায় চিকিৎসক এসে খুঁজে পান না। নার্সদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে হয়। বেশিরভাগ সময় নার্সদেরও পাওয়া যায় না। ডেকে ডেকে আনতে হয়। আমার মতো অনেক রোগী সিঁড়িতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা

সিঁড়ির কোণে বিছানা পেতে চিকিৎসা নেওয়া তারাকান্দা উপজেলার হৃদয় মিয়া (৩৫) বলেন, ‘পেটে আলসারের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে সিঁড়ির কোণে আশ্রয় নিয়েছি। ওয়ার্ড থেকে দূরে হওয়ায় এখানে চিকিৎসক দেখতে আসেন না। ডেকে আনতে হয়। অতিরিক্ত রোগীর কারণে হাসপাতালের কোথাও জায়গা নেই। অধিকাংশ রোগী বারান্দা ও সিঁড়ির কোণে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানালেন মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চিকিৎসক খোরশেদুল আলম। তিনি বলেন, ‘ঈদের পর হাসপাতালে অতিরিক্ত হারে রোগী বেড়ে গেছে। অনেকে জায়গা না পেয়ে বারান্দা ও সিঁড়ির কোণে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে রোগীরা যেখানে থাকুক চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের খুঁজে খুঁজে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।’

মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে জানিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের সময় রোগীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। ঈদের দুদিন পর থেকে রোগী বাড়তে থাকে। যা এখন তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখানের রোগীরা বিনামূল্যে খাবার ও ওষুধসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদের।’

Source link

Related posts

আবেদন করার আগেই শিক্ষার্থীদের কলেজে ‘অটো ভর্তি’

News Desk

নিয়ামতপুরে করোনা সংক্রমণ রোধে সতর্কতা জারী

News Desk

এমপিকে কল করে টাকা চাওয়া যুবক আটক

News Desk

Leave a Comment