২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিহারে উৎসবে মেতেছে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই
বাংলাদেশ

২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিহারে উৎসবে মেতেছে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলীর মহামুনি গ্রামে ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো মহামুনি বৌদ্ধবিহারে পাহাড়ি ও বাঙালির অংশগ্রহণে মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব। চলছে পাহাড়ি-বাঙালি সবার উৎসব। শনিবার  (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকে বিহারের প্রাঙ্গণে ভিড় জমান হাজারো পুণ্যার্থী। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বিহার দর্শনে আসেন তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন। আসেন বাঙালিরাও। এর ধারাবাহিকতায় এবারও মন্দির প্রাঙ্গণে বসেছে মেলা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নেমেছিল মানুষের ঢল।

বাংলা বছরের শেষ দিন, অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিনকে বলা হয় চৈত্র সংক্রান্তি। হিন্দুশাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যময় বলে মনে করা হয়। একসময় এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি উৎসব হতো চৈত্র সংক্রান্তিতে। আবহমানকাল ধরে বাংলাজুড়ে চলে প্রবহমান লোক উৎসব। বাংলার গ্রামে গ্রামে এই উৎসব নিয়ে আসে নতুন বছরের আগমন বার্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৌদ্ধবিহারে আসা কেউ ব্যস্ত পুকুরে পুণ্যস্নানে, কেউ প্রার্থনা ও আরাধনায়। এ নিয়ে পুণ্যার্থীদের মাঝে অন্যরকম উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। বিহারের চার পাশে বসেছে বৈশাখী মেলা। যেখানে মৌসুমি ফল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা বসেছে। পাওয়া যাচ্ছে বাসায় ব্যবহৃত মাদুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র। শিশু-কিশোরদের জন্য আছে নাগরদোলাসহ খেলনার বিভিন্ন রাইড। দেখে মনে হচ্ছে, পাহাড়ি-বাঙালি সবার উৎসব চলছে। উৎসবে মেতেছে ছোটবড় সবাই।

খাগড়াছড়ি থেকে মন্দিরে আসা অনুমৎ মারমা বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে মহামুনি বিহারে আসি। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, পয়লা বৈশাখের আগের দিন পুণ্যলাভের আশায় এখানে আসি। এবারও পরিবার নিয়ে এসেছি। পুণ্যস্নান ও প্রার্থনা করেছি। মন্দিরের সামনের মেলা থেকে অনেক কিছু কিনেছি।’

পাহাড়ি-বাঙালি সবার উৎসব চলছে, উৎসবে মেতেছে ছোটবড় সবাই

চৈত্র সংক্রান্তির দিন ঘিরে প্রতি বছর এই এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন মহামুনি গ্রামের বড়ুয়াপাড়ার বাসিন্দা নিলয় বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘উৎসব ঘিরে আমাদের যত আত্মীয়-স্বজন বিভিন্ন স্থানে থাকেন, তারা বেড়াতে আসেন। এখানের প্রতিটি বাড়িতেই একই অবস্থা থাকে। বিশেষ করে বিহারে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে আসে সবাই। আবার বাঙালিদের অনেকে দেখতে আসেন। সবাই উৎসবে মাতেন।’

পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রোকন উদ্দিন বলেন, ‘বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে মহামুনি বৌদ্ধবিহার পবিত্র তীর্থস্থান। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাশাপাশি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন ও বাঙালিদের অংশগ্রহণে মিলনমেলায় পরিণত হয়।। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে এখানে পুণ্যলাভের আশায় আসেন পুণ্যার্থীরা। বিহারের সামনে বসে মেলা।’

মহামুনি মেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য পষুণ মুৎসুদ্দী বলেন, ‘সকাল থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন বৌদ্ধবিহারে আসতে থাকেন। এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যময় বলে মনে করা হয়। উৎসব ঘিরে বিহারের সামনে বসেছে মেলা। এই মেলার মূল আকর্ষণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজনের হাতের তৈরি জিনিসপত্র। এখানে আসা লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহামুনি গ্রামের সামাজিক সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী টিম। আছে পুলিশের টিম। মেলা ঘিরে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যাগে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।’

মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বাসায় ব্যবহৃত মাদুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র

মহামুনি গ্রামে টিলার ওপর মহামুনি বৌদ্ধবিহার অবস্থিত। ১৮০৫-১৮১৩ সালের মধ্যে চাইংগা ঠাকুর নামে এক ধর্মগুরু বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে বৌদ্ধবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। গৌতম বুদ্ধের শাক্যমুনি নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হয় মহামুনি মন্দির। এটি বৌদ্ধদের পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। ড. রামচন্দ্র বড়ুয়া তার ‘চট্টগ্রামের মগের ইতিহাস প্রাগুক্ত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ১৮০৫ সালে মহামুনি বৌদ্ধবিহার মন্দির ও মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। ১৮৪৩ সালে মং সার্কেলে রাজা মহামুনি বৌদ্ধবিহার চত্বরে চৈত্র মাসের শেষদিনে মেলার প্রবর্তন করেন। যা দেশজুড়ে মহামুনি মেলা নামে পরিচিতি পায়। 

Source link

Related posts

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা শনাক্তের হার ১৫ শতাংশ

News Desk

বগুড়ায় যমুনাপাড়ে লাল মরিচ নিয়ে নারীদের কর্মযজ্ঞ

News Desk

মোড়েলগঞ্জে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : শিশুর মৃত্যু, ঘের ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

News Desk

Leave a Comment