৬ লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদের জামাত
বাংলাদেশ

৬ লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদের জামাত

প্রায় ২২ একর আয়তনের এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের ঈদের জামাতে ছয় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকেই ১৭টি প্রবেশদ্বার দিয়ে মুসল্লিরা প্রবেশ করতে শুরু করেন ঈদগাহ মাঠে। তাদের সবাইকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার এই নামাজে ইমামতি করেন শামসুল হক কাসেমী।

ঈদের জামাতকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা ছিল। ড্রোন, ৩০টি সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মাঠটি পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ ছাড়াও প্রতিটি কাতারে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অংশ নেন। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, ডিজিএফআই, এনএসআইসহ সব ইউনিটের ছিল সক্রিয়তা। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকেও এসেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এবারে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল।

নামাজে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ প্রমুখ অংশ নেন।

এই ঈদ জামাতে অংশ নিতে ভারতের গঙ্গারামপুর এলাকার ওসমান আলী বলেন, ‘টিভি মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি দিনাজপুরে বড় জামাত হয়। আমার নিয়ত ছিল, সেটি কবুল হয়েছে। এত বড় জামাতে অংশ নিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।’

নীলফামারী থেকে এসেছেন আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘রাতে নীলফামারী থেকে এসে আবাসিক হোটেলে ছিলাম। সকালে এখানে এসেছি। এখানে দুঃখ নিয়ে এসেছি, আমার সহধর্মী গত বছরে ইন্তেকাল করেছেন। আমি আমার স্ত্রীর জন্য দোয়া কামনা করেছি।’

জয়পুরহাট থেকে আসা সাওমিদ হোসেন এসেছেন জয়পুরহাট থেকে। তিনি বলেন, ‘আমার সৌভাগ্য যে এত বড় জামাতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। আশা করছি, আগামীতেও এই মাঠে নামাজ আদায় করবো। সবাইকে এই মাঠে নামাজ আদায় করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

মুসল্লি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সদরের মাসিমপুর এলাকা থেকে এসেছি। এশিয়ার বড় ঈদগাহে জামাতে নামাজ পড়লাম সবার সঙ্গে। খুব ভালো লাগলো।’

পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘আমরা অনেক খুশি। শান্তিপূর্ণভাবেই ঈদের নামাজ আদায় সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যাপক ছিল, মুসল্লিরা নিরাপদে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। পুলিশের নিরাপত্তা ও সক্ষমতার প্রতি সবার যে আস্থা, সে জন্য আমরা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

সকাল ৭টা থেকেই মাঠের ১৭টি প্রবেশদ্বার দিয়ে মুসল্লিরা প্রবেশ করতে শুরু করেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা সুন্দর একটি ঈদের জামাত করতে পেরেছি। এত বড় ঈদের জামাত যারা যুক্ত ছিলেন তাদের সবাইকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।’

ঈদগাহ মিনার ও ময়দানের পরিকল্পনাকারী এবং প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘এই ঈদের জামাতে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণভাবে যাতে নামাজ আদায় করতে পারেন সে জন্য সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরে এই মাঠে মুসল্লিদের সংখ্যা বাড়ছে। আগামীতেও এই সংখ্যা বাড়বে এবং গোটা বিশ্বের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন।’

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এ ছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিক দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষ। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছর এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।

Source link

Related posts

সরকারের চলতি মেয়াদেই যশোরে হবে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল: কাজী নাবিল

News Desk

পাহাড়ে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় উপভোগ করতে পর্যটকের ভিড়

News Desk

একসঙ্গে মা-দাদি-নানিকে হারালো ৭ মাসের শিশুটি

News Desk

Leave a Comment