‘রাইতে ঘরে ঢুকপো পানি, হের ওপর ভাঙন’
বাংলাদেশ

‘রাইতে ঘরে ঢুকপো পানি, হের ওপর ভাঙন’

‘পানির সেই রহম বাইর (বৃদ্ধি)। রাইতে ঘরে ঢুকপো। হের ওপর নদী ভাঙন শুরু হইছে। বাড়িত থাইকপার পামো না মনে কয়। কী হইবো কবার পাইতাছি না’। সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতিতে নিজেদের আশু দুর্গতি নিয়ে এভাবেই বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের বাসিন্দা জাহেদা বেগম (৫৪)।

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকালে জাহেদার বাড়ির আঙিনায় পৌঁছেছে। পানি দ্রুত বাড়ায় তিনি আশঙ্কা করছেন, রাতেই পানি আঙিনা ডিঙিয়ে তার ঘরের ভেতর ঢুকবে। এর ওপর তাদের গ্রামে শুরু হয়েছে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। সবমিলিয়ে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়েছেন জাহেদা ও তার গ্রামবাসী।

জাহেদা বলেন, ‘নিচা জায়গার যাগো বাড়ি তাগো ঘরগুলাত পানি উঠছে। আইজ রাইতে আমাগো ঘরেও উঠবো মনে কয়।’

অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে কুড়িগ্রামের প্রধান প্রধান নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। আগামী ছয় দিন ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবো জানায়, জেলার প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সদরের সেতু পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার  বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেইসঙ্গে বাড়ছে তিস্তার পানি।

পাউবোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ছয় দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমায় পৌঁছাতে পারে। এতে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

বৃহস্পতিবার নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকার কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, দুধকুমার অববাহিকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীরঝাড় ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ, বল্লভের খাস, নারায়ণপুর, নুনখাওয়া ও বামনডাঙা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে একের পর এক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। অনেক পরিবার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নিজেদের নৌকা ও শুকনো খাবার প্রস্তুত রেখেছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে গবাদিপশু স্থানান্তর ও খড় মজুত করছে। পানি বৃদ্ধিতে পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছেন নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।

দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ ইউনিয়নের পুঁটিরচর, ফান্দেরচর, চর দামাল গ্রাম, মাঝের চর ও আদর্শ বাজার গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এসব চরাঞ্চলের নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে।

ফান্দেরচর গ্রামের বাসিন্দা জামিউল বলেন, ‘পানি বাড়তাছে। সারাদিন অনেক পানি বাড়ছে। মাইনষের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকতাছে।’

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইউনিয়নের চর বালাডোবাসহ অপেক্ষাকৃত নিচু চরগুলোর বাসিন্দাদের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহমেদ সাদাত বলেন, ‘আমি রায়গঞ্জ ইউনিয়নের কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু বাড়িঘরে পানিও প্রবেশ করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’

নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে

সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার মজুত এবং আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় নৌকা প্রস্তুত রেখেছি। পশুখাদ্যের যেন ঘাটতি না হয়; সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রেখেছি।’

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আগামী ১৮-১৯ জুলাই বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এতে নিম্লাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এরপর পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।’

Source link

Related posts

বরিশাল একদিনে আরও ১৬ জনের মৃত্যু

News Desk

রাজশাহী মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে দুই দিনে ৭ জনের মৃত্যু

News Desk

নিহত ৩ সন্ত্রাসীর লাশ নেয়‌নি স্বজনরা, বেওয়া‌রিশ হি‌সে‌বে সৎকার

News Desk

Leave a Comment