মৃত্যুর পাঁচ দিন পর গত পরশু সমাহিত হয়েছেন ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন শেষে এক দিন তার মরদেহ রাখা হয় সান্তোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। সেখানেই ফুটবলের রাজাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান ব্রাজিলিয়ানরা। পরে ফায়ার সাভির্সের বিশেষ গাড়িতে করে সান্তোসের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে তার মরদেহ নেওয়া হয় শেষ আশ্রয়স্থল সান্তোসের মেমোরিয়াল নেক্রোপোল একুমেনিয়াত সমাধিস্থলে। সেখানেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মূলপর্ব সেরে তাকে সমাহিত করা হয় নেক্রোপোল একুমেনিয়াত সমাধিস্থলের নিচ তলায়!
বিশ্ব গণমাধ্যমসূত্রে জানা গিয়েছিল কিংবদন্তি পেলেকে সমাহিত করা হবে ১৪ তলাবিশিষ্ট সমাধিস্থলটির ৯ম তলায়। যে তথ্যটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৯ সালে পেলে নিজেই সমাধিস্থলটির নিচ তলায় নিজের সমাধিস্তম্ভের (কবর) জন্য জায়গা কিনে রেখেছিলেন। নিজের কেনা সমাধিস্তম্ভেই অনন্তকালের জন্য সমাহিত হয়েছেন তিনি।
কবর তো নয়, যেন কিংবদন্তি ফুটবলারের আস্ত একটা ফুটবল জাদুকর। ২০০ বর্গমিটার সমাধিস্তম্ভটি ফুটবলের সব সরঞ্জাম দিয়েই সাজানো হয়েছে। সমাধিস্তম্ভের ঠিক মাঝখানে বসানো হয়েছে পেলের সুগন্ধিযুক্ত মরদেহের কফিন। কফিনের চারপাশটা কিংবদন্তি পেলের স্বর্ণালি ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সব ছবি দিয়ে ঘেরা।
বিশ্ব ফুটবলে পেলের বিশেষত্ব যেমন, চিরনিদ্রায় শায়িতও হলেন বিশেষ সমাধিস্থলে। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত নক্রোপোল একুমেনিয়াত সমাধিস্থলটিই বিশ্বের প্রথম খাড়া সমাধিস্থল। ১৪ তলাবিশিষ্ট বিশাল একটা বিল্ডিং। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সমাধিস্থলও এটিই। সমাধিস্থলটির ৪০ হাজার বর্গমিটার বা ৪ লাখ ৩০ হাজার বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে!
সমাধিস্থলটির ভেতরে আছে একটা বিশালাকৃতির রেঁস্তোরা, যেটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। আছে একটা প্রার্থনাগৃহ, একটি অটোমোবাইল জাদুকর, একটি মাছের পুকুর। আছে একটি পক্ষীশালা (পাখি লালন-পালনের ঘর)। সমাধিস্থলটিতে আছে ১৮ হাজার সমাধিস্তম্ভ বা কবরের জায়গা। আছে আরো অনেক কিছুই।
সেই ২০০৩ সালে নিজের জন্য এই সমাধিস্থলটিকে পছন্দ করেন পেলে। ২০১৯ সালে জায়গাও কিনে রাখেন। তার মতে, এটি কেবলই একটা সমাধিস্থল নয়, এটা আধ্যাত্মিক শান্তি ও প্রশান্তির স্থান। কারণ আছে আরো একটি। এই সমাধিস্থলেই যে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন তার বাবা ডনডিনহো, তার ফুফু, ভাই এবং মেয়ে। সেই হিসেবে নেক্রোপোল একুমেনিয়াকে কিংবদন্তি পেলেদের পারিবারিক সমাধিস্থলও বলা যায়!