Image default
বিনোদন

চলচ্চিত্রকে অশ্লীলতা থেকে ফেরানো কি সম্ভব?

মানুষ অনুকরণপ্রিয়। বিশেষ করে কোমলমতি শিশু ও কিশোররা। তারা চোখের সামনে যা দেখছে তা-ই অনুসরণ করছে। আগে শিশুদের জন্য খেলার মাঠ থাকতো, এখন দেশের অধিকাংশ শিশুই মাঠে লেখার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা ঘরের ভেতরেই থাকছে বেশি, সেই ঘরে থেকে তারা যা দেখছে তা-ই অনুসরণ অনুকরণ করছে।

এখন বেশিরভাগ ঘরেই টেলিভিশন রয়েছে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ রয়েছে। আর প্রায় সব ঘরেই মোবাইল ফোন রয়েছেন। এসব মাধ্যমগুলোতে বিনোদনের নামে যা দেখানো হচ্ছে তা আমাদের মূল সংস্কৃতির সঙ্গে মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

বিশেষ করে ফেসবুক ও ইউটিউবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট দেখানো হয়; যা আমাদের শিশুরা দেখছে, কিশোরেরা দেখছে। আর যা দেখছে তা অনুকরণ-অনুসরণ করার চেষ্টা করছে।

সিনেমা যে শুধু অনৈতিকতা শেখায় তা কিন্তু নয়, সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালক চাইলেও অনৈতিকতা থেকে সিনেমাকে বের করে আনা সম্ভব। অনেক সময় নাটক-সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালকরা অজুহাত দেখান যে দর্শক ধরে রাখতে তারা রগরগে সিন দেখাতে বাধ্য হচ্ছেন, প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি কিন্তু সে রকম নয়।

এখন দর্শকরাও কিন্তু রুচিশীল দৃশ্য দেখতে চান। অথচ সিনেমা-নাটক আমাদের চিরায়ত কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গেছে। এ সময়ে যেসব সিনেমা ও নাটক নির্মিত এবং প্রদর্শিত হচ্ছে, সেগুলোর গল্প ও চিত্রনাট্য দেখলে বোঝা যায়, আমাদের মূলধারার সংস্কৃতির ছিটেফোটাও তাতে প্রতিফলিত হচ্ছে না। প্রেম-ভালোবাসা, ভাঁড়ামোপূর্ণ কমেডি গল্প ছাড়া নাটক নির্মিত হতে দেখা যায় না।

এসব নাটকে না আছে আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধসম্পন্ন শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিফলন, না আছে নীতি-নৈতিকতার প্রদর্শন। এমনকি আমাদের যুথবদ্ধ পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় শাসন-বারণের কোনো আবহ দেখা যায় না।
অথচ একটা সময় আমাদের সিনেমা-নাটকে পরিবারের সুখ-দুঃখ, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হতো। বিপদে-আপদে আল্লাহর নাম নেওয়া, নামাজ পড়া, আজান এবং মসজিদের দৃশ্য প্রায় প্রত্যেক নাটক-সিনেমায় দেখানো হতো। নায়ক-নায়িকা কিংবা মা-বাবার চরিত্রগুলোর সংলাপের মাধ্যমে ধর্মীয় চেতনার প্রকাশ পেতো।

এখন কোনো সিনেমা বা নাটকে এ ধরনের দৃশ্য দেখানো হয় না। আমাদের দেশ যে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ এবং এখানের পরিবার ও শিল্প-সংস্কৃতি, আচার-আচরণে রক্ষণশীল, তা যেন নির্মাতারা ভুলে বসে আছেন। কোনো নাটক-সিনেমায়ই আমাদের চিরায়ত মূলধারার সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও নীতি-নৈতিকতার বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে না।

অথচ পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাটক-সিনেমা আবর্তিত হয় তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক প্রথা নিয়ে। আমরা যদি ইরান ও তুরস্কের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, তাদের নাটক-সিনেমায় পরিবার, সমাজ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব নাটক-সিনেমা অস্কার পুরস্কার পাওয়াসহ সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

চলচ্চিত্র শিল্প যে কোনো দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। সুস্থধারার শিল্পগুণসমৃদ্ধ ও মানসম্মত চলচ্চিত্র যেমন দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রাখে তেমনি দেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করে।

রুচিশীল সুস্থ জীবন-পরিবেশ সৃষ্টিতে, মানুষের সৎ ও সুশীল চরিত্র গঠনে, সমাজ জীবনে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠায় চলচ্চিত্র সহায়ক ভূমিকা পালন করে। চলচ্চিত্র যে শুধুই বিনোদন মাধ্যম তা নয়। যুবসমাজকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে ফিরিয়ে আনতে, চরিত্র গঠনে চলচ্চিত্র রাখে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
অথচ বিভিন্ন দেশের লুটেরা ধনিকরা চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে লালন করছে বিকৃত রুচি, স্থূল যৌনাচার, উৎকট দেহপ্রদর্শন অশালীন বেশভূষা, লোমহর্ষক ঘটনাময় অপরাধ কাহিনী। অর্থ, অস্ত্র, নৈরাজ্য, যৌনতা ও হিংস্রতাকে পুঁজি করে তারা মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঘটিয়ে তরুণ সমাজকে সংগ্রামী, দেশব্রতী চেতনা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশও এ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই।

চলচ্চিত্রের দায়িত্ব কি দর্শককে শুধুই বিনোদন জোগানো? কাহিনীতে বিনোদনের প্রাধান্য না থাকলে কি চলচ্চিত্রের বক্তব্যের প্রতি দর্শকের কোন আগ্রহ তৈরি হয় না? উত্তর সচেতন মানুষের অজানা নয় নিশ্চয়ই! বিশ্ব-চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যে পরিচালকরা খ্যাতি অর্জন করেছেন তারা চলচ্চিত্রকে মুনাফা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে চটক আর চাকচিক্য-সর্বস্ব বিনোদনধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি। বরং তারা এমন ছবির গতানুগতিক সূত্র প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের ছবি প্রকাশ করেছেন সমাজসচেতন বক্তব্য এবং তাদের ছবির নির্মাণশৈলী হয়ে উঠেছে প্রথাবিরোধী, কুসংস্কার মুক্ত, বিজ্ঞানমনষ্ক ও নান্দনিক।

ছাত্র তথা যুবসমাজ থেকে শুরু করে নৈতিক অবক্ষয়ে নিমজ্জিত সবাইকে উত্তোলনের জন্য আমাদের দেশের পরিচালকদেরও স্থূল রুচি লালন না করে, অনাবিল আনন্দ দানের সঙ্গে শিক্ষামূলক ও জাতি গঠনমূলক উপাদান যোজন করে মানসম্মত শিল্পকর্মের পর্যায়ে নির্মিত করে এদেশের চলচ্চিত্রে নতুন ধারা তৈরি করে অন্ধ কুসংস্কার, বিজ্ঞান-বিমুখ মনোজড়তায় অনড় সমাজ পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

Related posts

শিল্পী-কলাকুশলীদের জন্য সৌমিত্রের নামে হাসপাতাল

News Desk

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোট দিতে পারছেন না যেসব তারকা শিল্পী

News Desk

অবসরের রহস্য ভাঙলেন অমিতাভ বচ্চন

News Desk

Leave a Comment