Image default
বাংলাদেশ

‘২৫ লাখ কোটি পাওনায় কিছু হয় না, ২৫ হাজারে কৃষকের কোমরে দড়ি’

যাদের কাছে ২৫ লাখ কোটি টাকা পাওনা আছে, তাদের কিছু হয় না। অথচ ২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- এমন মন্তব্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালতের চেম্বার বিচারপতির বেঞ্চ।

ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিসঅনার মামলা করতে পারবে না বলে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চাইলে সোমবার শুনানিতে এ মন্তব্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

পরে চেম্বার আদালত আগামী ১ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ রেখে ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। গত ২৩ নভেম্বর এ রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।

ওই রায়ে বলা হয়, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক ডিসঅনার মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে। চেক ডিসঅনার মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের বরাইল গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীসহ তিনজনের আপিল গ্রহণ করে এ রায় দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

রায়ে আদালত বলেছেন, ব্যাংকঋণের বিপরীতে যে ব্ল্যাংক চেক নিচ্ছে সেটা জামানত, বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসাবে নেওয়া সেই চেক দিয়ে ‘চেক ডিসঅনার’ মামলা করা যাবে না। ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে বলেও রায়ে পর্যবেক্ষণ দেন উচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে ঋণ আদায়ে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক ডিসঅনার মামলা সরাসরি খারিজ করে সেসব মামলা অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দিতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে শুধু অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে এবং সব ধরনের ঋণে বিমা নিরাপত্তা (ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ) দেওয়ার নির্দেশনা জারি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রায়ে নির্দেশ দেন আদালত।

এ রায়ের পাঁচ দিনের মাথায় তা স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। সোমবার তা চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানিতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন এএম আমিন উদ্দিন। যিনি একই সঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল বাকী।

শুনানির শুরুতে ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়। হাইকোর্ট রায় দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিসঅনারের মামলা করতে পারবে না। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত বিচারাধীন সব মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। তখন চেম্বার বিচারপতি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না। আদালত এ সময় ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অথচ যাদের কাছে ২৫ লাখ কোটি টাকা পাওনা তাদের কিছু হয় না।

ঋণ দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া ব্ল্যাংক চেকের বিষয়ে চেম্বার বিচারপতি বলেন, ‘এই চেকে কে স্বাক্ষর করে? কে টাকার অঙ্ক বসায়? কে কলাম পূরণ করে? তার কোনো হদিস নেই। এই চেক নেওয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার পরও ব্যাংকগুলো কেন মানছে না?

তখন আইনজীবী আমিন উদ্দিন চেম্বার বিচারপতির কাছে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দরকার। নইলে ঋণের টাকা আদায় করা যাবে না। তখন চেম্বার বিচারপতি আইনজীবীর কাছে এ সংক্রান্ত উদাহরণ দেখতে চাইলে তা দেখাতে ব্যর্থ হন ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী।

Related posts

এবার দুই শতাধিক অটোভ্যানের বহর নিয়ে আখতারের শোডাউন

News Desk

প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ গেলো পুলিশ সদস্যের

News Desk

চীন থেকে কেনা হবে কোভিড-১৯ এর দেড় কোটি ডোজ টিকা

News Desk

Leave a Comment