খাদ্য ও জ্বালানি সংকট আরো গভীরের আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক

খাদ্য ও জ্বালানি সংকট আরো গভীরের আশঙ্কা

ফাইল ছবি

সংকুচিত মুদ্রার মান বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি সংকটকে আরো গভীর করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির সংকুচিত মুদ্রার মান খাদ্য ও জ্বালানির দামকে এমনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে যা খাদ্য ও জ্বালানি সংকটকে আরো গভীর করতে পারে। এরই মধ্যে অনেক দেশ এই সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক থেকে সংস্থাটি এ শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বিশ্ব মন্দার উদ্বেগের মধ্যে বেশিরভাগ পণ্যের দাম সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ থেকে গত মাসের শেষ পর্যন্ত মার্কিন ডলারে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে ৬০ শতাংশ তেল আমদানিকারী বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সময়ে দেশীয় মুদ্রায় তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, জ্বালানি পণ্যের উচ্চমূল্য যা কৃষি উৎপাদনে ইনপুট হিসেবে কাজ করে খাদ্যের দাম বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যমূল্যের মুদ্রাস্ফীতি গড়ে ২০ শতাংশের বেশি ছিল। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে চালের দাম স্থিতিশীল থাকার কারণে পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরই একমাত্র অঞ্চল যেখানে খাদ্যমূল্যের মূল্যস্ফীতি কম ছিল।

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাবলো সাভেদ্রার মতে, বেশির ভাগ দেশেই পণ্যের দাম বাড়লেও বর্তমানে কমেছে। তবে এই কমার হার গত পাঁচ বছরে গড় স্তরের তুলনায় অনেক বেশি। এ বিষয়টি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার চ্যালেঞ্জকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। একইসঙ্গে খাদ্য সরবরাহকে উৎসাহিত করতে ও বিতরণের সুবিধার্থে এবং প্রকৃত আয়কে সমর্থন করার জন্য নীতিগুলোর একটি বিন্যাস প্রয়োজন।

তিনি জানান, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিদ্যুতের দাম বেশ অস্থির ছিল। তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুতের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরে বিদ্যুতের দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও ২০২৩ সালে বিদ্যুতের দাম প্রায় ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই ১১ শতাংশ কমার পরও ২০২৩ সালে বিদ্যুতের দাম গত পাঁচ বছরের তুলনায় গড় ৭৫ শতাংশ বেশি হবে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট পাবলো সাভেদ্রা আরো জানান, ২০২৩ সালে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম গড়ে প্রতি ব্যারেল ৯২ ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা পাঁচ বছরের গড় থেকেও বেশি। প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার দাম ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কমার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে ২০২৪ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা এবং মার্কিন প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বিগত পাঁচ বছরে তাদের গড় দ্বিগুণ হবে। একইসঙ্গে ইউরোপীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম প্রায় চারগুণ বেশি হতে পারে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ডিরেক্টর এবং ইএফআই চিফ ইকোনমিস্ট আয়হান কোস জানান, উচ্চ পণ্যের দাম এবং ক্রমাগত মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে অনেক দেশ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সিনিয়র ইকোনমিস্ট জন ব্যাফেস জানান, কৃষিপণ্যের মূল্য হ্রাসের পূর্বাভাস বিভিন্ন ঝুঁকির বিষয়। প্রথমত ইউক্রেন বা রাশিয়ার রপ্তানি ব্যাঘাত, আবার বিশ্বব্যাপী শস্য সরবরাহে বাধা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত জ্বালানির দামের অতিরিক্ত বৃদ্ধি শস্য এবং ভোজ্যতেলের দামের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয়ত বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কমাতে পারে।

এমকে

Source link

Related posts

রানিকে যে উপহার দিয়েছিলেন গান্ধীজি

News Desk

ইরানে বিক্ষোভ কারণে মৃত্যুদণ্ডের মুখে ১০০

News Desk

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নীতিশ কুমার

News Desk

Leave a Comment