ক্ষেতে পচছে সয়াবিন
বাংলাদেশ

ক্ষেতে পচছে সয়াবিন

দেশে সয়াবিন তেলের চাহিদার সিংহভাগই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এখানে চাহিদার তুলনায় সয়াবিনের উৎপাদন খুবই কম। তবে দেশে যে কয়টি জেলায় এই তেল উৎপাদনের মূল উপাদান সয়াবিন চাষ হয় এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর উল্লেখযোগ্য। তবে জেলাটির মাটি ও আবহাওয়াও যেন দিনে দিনে সয়াবিন চাষের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি কিংবা খরার কারণে ব্যাহত হচ্ছে এই ফসল চাষ। ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতে। এ ছাড়া বীজ বপনের সময়ও বিপর্যয়ের মুখে পড়ছেন চাষিরা। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে থাকায় আধাপাকা সয়াবিন পচে গেছে। ফলে লোকসানের কবলে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।

জেলার কমলনগরের চর মার্টিন এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান, সয়াবিনের বীজ বপনের কয়েকদিনের মাথায় বৃষ্টি হয়েছে। এতে কিছু বীজ থেকে চারা গজায়নি। পরে পুনরায় বীজ বপন করতে হয়েছে।

তারা বলেন, ফসল ঘরে তোলার আগে আবারও বৃষ্টির পানিতে ক্ষেতে থাকা আধাপাকা সয়াবিন নষ্ট হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রভাবের কারণে লোকসানের কবলে পড়ছে কৃষক।

গত কয়েকদিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, চররমনী মোহন ও কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন, চর লরেন্স ও তোরাবগঞ্জ এলাকা ঘুরে মাঠে থাকা সয়াবিন নষ্ট হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উভূতি গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘দেড় একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছি। পুরোপুরি পুষ্ট না হতেই এবং পাকার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে যায়। জমে থাকা পানিতে গাছ মরে গেছে। এতে আশানুরূপ ফলন পাবো না।’

কৃষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে ক্ষেতে পানি জমে ৩২ শতাংশ জমির সয়াবিন পচে গেছে। আমার মতো অনেক চাষি এবার ক্ষতির মুখে পড়েছে।’

চররমনী মোহন ইউনিয়নের চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক নুর আলম বলেন, ‘৪০ শতাংশ জমির সয়াবিন এখন পানিতে। তবে সয়াবিনগুলো পুষ্ট হয়েছে। পাকার অপেক্ষায় আছি। বৃষ্টির পানি দ্রুত না শুকালে গাছ মরে সয়াবিন নষ্ট হয়ে যাবে। পাকা সয়াবিনে পানি লাগলে সেগুলোর রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়। বাজারে দাম পাওয়া যায় না।’

কৃষক হোসেন আহম্মদ বলেন, ‘সয়াবিন কেটে ক্ষেতে রেখেছি। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো ডুবে গেছে। এতে সয়াবিনে চারা গজেছে।’

উত্তর চর লরেন্স এলাকার কৃষক ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘ক্ষেতে পানি আছে। সয়াবিন এখনও পাকেনি। বৃষ্টি যদি আরও বাড়ে, তাহলে সেগুলো নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘এবার সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতে থাকা ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের দ্রুত সয়াবিন কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।’

কৃষকদের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করেন। সরকারিভাবে প্রণোদনা এলে তাদেরকে এর আওতায় আনা হবে।’

Source link

Related posts

ঘূর্ণিঝড় হামুন: নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সেন্টমার্টিনে মাইকিং

News Desk

গাইবান্ধায় কৃষকদের কে দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ে প্রশিক্ষণ

News Desk

সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়ি ঘিরে ‘স্মৃতি জাদুঘর’ গড়ে তোলার দাবি

News Desk

Leave a Comment