Image default
আন্তর্জাতিক

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

ভারতের লোকসভার সদস্যদের নিয়ে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের একটি বক্তব্য ঘিরে ভারতে তোলপাড় চলছে। সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্টে গত বুধবার বিরোধী দলের একজন সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে বিতর্কের সময় ভারতের এমপিদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যে ‘নেহরুর ভারত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে দেশের লোকসভার আইনপ্রণেতাদের অর্ধেকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার এ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ শুক্রবার ভারতীয় একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ভারত সিঙ্গাপুরের কাছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর একটি মন্তব্য সম্পর্কে অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে ভারতে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে বলে একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের হাইকমিশনার সাইমন ওংকে তলব করে অসন্তোষ জানিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, এশীয় মিত্রদের মধ্যে এ ধরনের অভিযোগের ঘটনা বিরল। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিঙ্গাপুর ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার এবং শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরের নেতার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য অযাচিত ছিল। আমরা বিষয়টি সিঙ্গাপুরের কাছে তুলে ধরেছি।’
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী সে দেশের সংসদে একটি আলোচনার সময় বলেন, ‘নেহরুর ভারত এমন জায়গা হয়ে পৌঁছেছে যেখানে মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, লোকসভার প্রায় অর্ধেক সাংসদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগসহ একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে। যদিও এটাও বলা হয়, এই অভিযোগগুলোর মধ্যে অনেকগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

গণতন্ত্র নিয়ে এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুসহ বিভিন্ন বিশ্বনেতার কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব নেতা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন এবং তা অর্জন করেছেন, তাঁরা প্রায়শই অসাধারণ সাহসী, সংস্কৃতিমান এবং অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী ও ব্যতিক্রমী ব্যক্তি হন। তাঁরা আগুনের মধ্যে নিজেদের সঁপে দিয়ে মানুষ ও জাতির নেতা হিসেবে গণ্য হন।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এমন মানুষ হলেন ডেভিড বেন-গুরিয়ন (ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী), জওহরলাল নেহরু।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা নতুন বিশ্ব গড়তে সাহসী পদক্ষেপ নেন। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করেন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম তাঁদের সেই উদ্যোগ ও প্রত্যাশাকে বজায় রাখতে পারে না।

রয়টার্স বলছে, নেহরুর প্রপৌত্র রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের পুরোনো নেতার প্রশংসাকে কাজে লাগিয়ে রাজনেতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের একহাত নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। টুইটারে এক বিবৃতিতে কংগ্রেস বলেছে, নেহরুর মহানুভবতা আজও বিশ্ব নেতাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি কতটা ব্যতিক্রমী নেতা ছিলেন, তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন দেশের বর্তমান নেতারা।

Related posts

কিয়েভে নেতৃত্ব পরিবর্তন চায় রাশিয়া

News Desk

৩০ বছর ধরে শৌচাগারে সমুচা তৈরি, রেস্তোরাঁ বন্ধ সৌদিতে

News Desk

সৌদিতে কমানো হলো তারাবির নামাজ

News Desk

Leave a Comment