আইটি সেক্টরে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ৩০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে তারুণ্যের মেধা আর প্রযুক্তির শক্তি কাজে লাগিয়ে একটি উপজেলা সদরে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সজিব ওয়াজেদ জয় ভাই আপনাদের উপহার দিয়েছেন শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার। এ সেন্টার থেকে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী বের হবে। এখন যে ২০ লাখ ছেলেমেয়ে আইটি সেক্টরে কাজ করছে, আমাদের টার্গেট ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং সবমিলে আইটি সেক্টরে ৩০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। পাশাপাশি আইটি সেক্টর থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করা। তার জন্য মূল দরকার ছিল ঘরে ঘরে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদপুরের ৪৩টি ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল নিয়ে গিয়েছি। চরাঞ্চলের ১৪টি ইউনিয়নও বাদ থাকবে না। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি দিয়ে জেলার সবক’টি ইউনিয়নেই আমরা হাইস্পিড ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি দেবো। যাতে করে ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করতে পারেন।’
পলক বলেন, ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্টের প্রশিক্ষণ বাড়াবো। সঙ্গে শিশু-কিশোর, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সারাদেশে ৩৫ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করছি।’
পলক আরও বলেন, ‘আমাদের আইসিটি বিভাগের ৫৫টি অনলাইন মার্কেটপ্লেস আমরা আইডেন্টিফাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছি। এই ৫৫টি মার্কেটপ্লেসে আমাদের যারা কাজ করে যে আয় করে, তার চার শতাংশ ক্যাশ বেক পাবে। তারা এসব কোম্পানির ছোট ছোট গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ করে। এ রকম সাড়ে ৬ লাখ তরুণ-তরুণী যার যার শহরে বা ঘরে বসে আউটসোর্সিং করে আয় করছে। আমরা সেইসব ফ্রিল্যান্সারদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চাই। তারা জব সিকার হবে না, তারা জব ক্রিয়েটর হবে। সেজন্যই শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে আমরা প্রশিক্ষণ দেবো। ৩ মাস, ৬ মাস এবং ১২ মাসের ডিপ্লোমা কোর্স করাবো এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যে সব সম্ভাবনাময়ী ভবিষ্যতমুখী প্রযুক্তি আছে—আর্টিফিশাল ইন্টেলিজেন্ট, রোবোটিক্স সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে। বিশ্বে এগুলোর লাখ লাখ দক্ষ কর্মশক্তির প্রয়োজনীয়তা আছে। সে কারণে এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েই শেষ নয়, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণের পর তাদের ইনকিউবেশন, ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করবো। সজিব ওয়াজেদ জয় আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি চান, আমাদের তরুণ প্রজন্ম এসএসসি-এইচএসসি পাস করে তারা বেকার হয়ে যাতে ঘরে বসে না থাকে। কিংবা সকলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়মুখী, সনদমুখী কিংবা বিদেশমুখী না হয়ে ছোট ছোট প্রশিক্ষণ নিয়ে যাতে তারা এ ধরনের দক্ষতা অর্জন করে উদ্যোক্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলতেন ঢাকা মানে বাংলাদেশ নয়, ঢাকার বাইরে যে হাজার হাজার গ্রাম আছে সেই গ্রামের উন্নয়ন হলেই বাংলাদেশ সোনার বাংলায় পরিণত হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই কনসেপটই বাস্তবায়ন করছেন।’
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘মতলব দক্ষিণের এ অনুষ্ঠানে এসে দেখলাম একটা মেয়ে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। তার পাশে আরেকজনের কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ভেবেছিলাম তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। তখন তাকে তার সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন সে বললো না, ভাই আমার পায়ে সমস্যা। আমি বিশেষভাবে সক্ষম। মেয়েটি লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্টের আওতায় ৫০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সে নিজের পায়ে শারীরিকভাবে দাঁড়াতে না পারলেও কর্মসংস্থানের দিক থেকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে।’