Image default
বাংলাদেশ

স্বপ্ন পূরণে এক হাতে বই অন্য হাতে কেটলি

মিলি আক্তার, বয়স ১৭ বছরের কম। দশম শ্রেণির এই ছাত্রীর এক হাতে পরিবার চালানোর ভার, অন্য হাতে বই। বাবা-মাকে নিয়ে সংগ্রামী জীবন তার। পরিবারের দেখভালের পাশাপাশি নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে সে।

ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের ধুৎরাহাটি গ্রামের আ. বারেক ব্যাপারীর মেয়ে মিলি আক্তার। সে ধুৎরাহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্যেও সে জেএসসি পরীক্ষায় সুনামের সঙ্গে কৃতকার্য হয়। মিলির বাবা বারেক ব্যাপারী চায়ের দোকান চালাতেন। ছয়-সাত বছর ধরে চোখের দৃষ্টি হারিয়ে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন তিনি। টাকার অভাবে চোখের অপারেশন করতে পারেননি। মা সূর্য খাতুন বৃদ্ধা এবং শারীরিকভাবে অক্ষম। চার ভাইবোনের মধ্যে বিয়ের পরে সবাই পেতেছেন আলাদা সংসার। একমাত্র মিলিই থাকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের ও বাবা-মায়ের পেটের তাগিদে মিলি আক্তার হাতে তুলে নিয়েছেন গরম চায়ের কেতলি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই বৃদ্ধ অসহায় দম্পতির একমাত্র ভরসা দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে মিলি আক্তার। তাদের জীবন যাপনের একমাত্র অবলম্বন চায়ের দোকান। এ ছাড়া তাদের আয়ের আর কোনো উৎস নেই। মিলি চার-পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় রসুলপুর বাজারে চায়ের দোকান করে সংসার চালাচ্ছে। পাশাপাশি চলছে তার পড়াশোনাও। সকাল হলেই স্থানীয় একটি বাজারে নিজ হাতে চা তৈরি করে বিক্রি করে মিলি। এভাবে সারাদিন শেষে রাত প্রায় সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলা ওই দোকানের আয়েই চলে তাদের সংসার।

চা বানানোর ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় মিলির সঙ্গে। সে বলে, ‘আমার একটাই আশা লেখাপড়া করে উচ্চশিক্ষা অর্জন করব। মানুষের মতো মানুষ হবো। চাকরি করে জীবন কাটাব। কিন্তু তা আর পারছি কই? ভাইয়েরা সংসারের কোনো খোঁজ রাখেন না। মা-বাবা কাজকর্ম করতে পারে না। আয়ের ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে আমাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। কিন্তু চায়ের দোকান চালিয়ে সংসারের হাল ধরে আবার পড়াশোনা করা অনেক কষ্টের।

মিলির বাবা আ. বারেক ব্যাপারী আবেক আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নিজের প্রতি খুব লজ্জা ও ঘৃণা হয়। মেয়ে এই বয়সে বাজারে মানুষের হাতে চা দেয়। কিন্তু খাব কী? সংসার চলবে কীভাবে? আমি চোখে দেখি না, কাজ করতে পারি না। কী আর করার, সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

মিলির স্কুল শিক্ষক মো. ইউনুস মিয়া বলেন, ‘মিলি একজন মেধাবী ছাত্রী। দোকানের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। এরপরও জানামতে সে লেখা পড়ায়ও ভালো। আমাদের স্কুল থেকে যতটুকু সম্ভব ওকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। মিলির সহযোগিতায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেতী প্রু বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।

Related posts

২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড করোনাভাইরাসে ১১২ জনের মৃত্যু

News Desk

১২টি কোরবানি পশুর হাট বসাতে চায় চট্টগ্রাম নগরে

News Desk

ঈদের পরও উভয়মুখী মানুষের ঢল মাওয়া ও শিমুলিয়ার ঘাটে

News Desk

Leave a Comment