Image default
আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানকে ঠেকাতে তালেবানের সঙ্গে গোপন আলোচনায় ভারত

আফগানিস্তান ইস্যুতে নিজেদের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে এসেছে ভারত। এই প্রথম আফগান সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে নয়াদিল্লি। তবে পাকিস্তান বা ইরানপন্থি নয়, তালেবানের ‘জাতীয়তাবাদী’নেতাদের সঙ্গেই আলোচনা করছে তারা। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে একথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

এর আগে প্রায় ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে উভয়পক্ষ। সেখানে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করেন। সেই অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করা বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের কাজ চলছে।

এদিকে সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটির শাসন ক্ষমতায় ফের তালেবানরা ফিরতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে সেখানে পাকিস্তান ও ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। আর তাই আফগানিস্তানে ভারতের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে দীর্ঘদিনের নীতি পরিবর্তন করে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ করে নয়াদিল্লি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় এক কর্মকর্তার বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারাই মূলত তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করছেন। তবে পাকিস্তান ও ইরানের ঘনিষ্ঠ তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে না। পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ কোনো তালেবান নেতার সঙ্গে কোনো রকম আলোচনায় যেতে নারাজ ভারত।

নয়াদিল্লির দাবি, তালেবানের ভেতরে ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে পরিচিত নেতা বা গ্রুপগুলোর জন্যই আলোচনার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। যা গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। তাতে বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে।

তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-সহ আফগানিস্তানের প্রথম সারির নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে তালেবানদের সঙ্গেও নয়াদিল্লি কথাবার্তা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে ভারতের সরে আসার কারণ হিসেবে গেটওয়ে হাউসের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক ফেলো সমীর প্যাটেল বলছেন, মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

তার ভাষায়, ‘সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া কয়েক মাস বা সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তানে যুদ্ধ নিশ্চিত। সেইসঙ্গে এটাও নিশ্চিত যে, যুদ্ধের পর তালেবান যোদ্ধারাই কাবুল দখল করবে। তাই নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতেই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ভারত।’

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।

অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধটির পেছনে দেশটি এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

Related posts

মুসলিমদের অভয় দিতে কানাডায় হাজার হাজার মানুষের পদযাত্রা

News Desk

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চান এরদোয়ান

News Desk

চীনে আবাসিক ভবনে আগুন, নিহত ১০

News Desk

Leave a Comment