সুন্দরবনের দুবলার চরে আজ থেকে রাস উৎসব শুরু
বাংলাদেশ

সুন্দরবনের দুবলার চরে আজ থেকে রাস উৎসব শুরু

বঙ্গোপসাগরের মোহনায়, সুন্দরবনের দুবলার চরে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হচ্ছে আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) থেকে। ইতোমধ্যেই সাগর তটে রাস উৎসবকে ঘিরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে, শুধু সনাতন ধর্মালম্বীরা অংশ নিতে পারবেন রাসপূজা ও পুণ্যস্নানে। তবে এবারও রাস উৎসবে থাকছে না কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা মেলার আয়োজন।

রাস উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবনে পুণ্যার্থী ছাড়া অন্য কারও প্রবেশের অনুমতি দেয়নি বন বিভাগ। পুণ্যার্থীরা নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। আর ফিরেও আসতে হবে একই রুট দিয়ে। সব পুণ্যার্থীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে।

এদিকে, রাস উৎসব ঘিরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের বেশ কয়েকটি টিম শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল শুরু করেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, নির্ধারিত রাজস্ব জমা দেওয়ার পর বন বিভাগ থেকে পাস (অনুমতি) নিয়ে নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে পুণ্যার্থীরা রাস উৎসবে যেতে পারবেন এবং একই রুট দিয়ে তাদের ফিরতে হবে।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর তটবর্তী সুন্দররবনের দুবলার চরের ঐতিহাসিক রাস উৎসব ঘিরে এবার ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী ছাড়া কোনও ট্যুরিস্ট যাওয়ার অনুমতি পাবেন না সেখানে। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, হরিণ শিকার ও প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণরোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুণার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচটি নৌপথ।’ উৎসবকে কেন্দ্র করে বন বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

যেসব রুট দিয়ে পুণ্যার্থীরা রাস উৎসবের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন সেগুলো হলো– ঢাংমারী-চাঁদপাই স্টেশন ত্রিকোনা আইল্যান্ড হয়ে দুবলার চর; বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর; বুড়িগোয়ালিন, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদীর পর দুবলার চর।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ নভেম্বর থেকে প্রতি বছরের মতো পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনের রাস উৎসব। আলোরকোলে নির্মিত অস্থায়ী মন্দিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সনাতন ধর্মের মানুষ এসে সেখানে পূজা করবেন। সনাতন ধর্মের বিধান অনুযায়ী পূর্ণিমার ভরা তিথিতে ৫ নভেম্বর ভোরের সাগরের প্রথম জোয়ারের লোণা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হবে সনাতনীদের এই মিলন মেলা।

ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, ১৮ শতকের শেষভাগে বা ১৯ শতকের শুরুর দিকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাসপূজা শুরু হয়। হরভজন দাস নামে এক হিন্দু সন্ন্যাসী এই রাসপূজার গোড়াপত্তন করেন। তিনি তার ভক্তদের নিয়ে রাস পূর্ণিমার তিথিতে দুবলার চরে পূজা-অর্চনা ও সাগরের লোণা জলে পুণ্যস্নান করতেন। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকেই ধীরে ধীরে দুবলার চরের রাস মেলার প্রচলন ঘটে।

এর পর থেকে দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের আয়োজনে সাগরদীপ আলোরকোলে রাস পূর্ণিমা সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও পর্যটন উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে লাখো মানুষের লোকসমাগম ঘটে। সনাতন ধর্মের মানুষের পাশপাশি উৎসবে যোগ হয় দেশি-বিদেশি পর্যটকও। ভক্ত ও পর্যটকদের ভিড়ে চাপ বাড়তে থাকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের ওপর। মেলাকে কেন্দ্র করে শব্দ দূষণ ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ক্ষতির মুখে পড়ে বনের পরিবেশ। এ ছাড়া বাড়তে থাকে পুণ্যার্থীর ছদ্মবেশে আসা হরিণ শিকারি চক্রের অপতৎপরতা। শেষমেষ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও দূষণের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে সীমিত করা হয় মেলার কার্যক্রম। এর পর থেকে রাস উৎসব শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও পুণ্যস্নান উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।

রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি ও দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ৩ নভেম্বর থেকে রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে মূল পূজাস্থল আলোরকোলে শুরু হয়েছে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির নির্মাণের কাজ। এই মন্দিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মের ভক্তবৃন্দ এসে তাদের মনোবাসনা পূরণের আশায় পূজা-অর্চনা করবেন। ৫ নভেম্বর প্রত্যুষে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীরা যে-যার গন্তব্যে ফিরে যাবেন। উৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে কমিটি।

বন বিভাগের তথ্য মতে, প্রতি পুণ্যার্থীকে তিন দিনের জন্য ৭৫ টাকা, নিবন্ধন যুক্ত প্রতিটি ট্রলারের (তিন দিন) জন্য ৩০০ টাকা, নিবন্ধনবিহীন প্রতিটি ট্রলারের (তিন দিন) জন্য ১ হাজার টাকা এবং প্রতিটি ট্রলারের অবস্থান ফি (প্রতিদিন) ৩০০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে।

Source link

Related posts

চট্টগ্রাম বন্দরে ২ লাখ টন চাল ও গম নিয়ে আরও ১০ জাহাজ

News Desk

মুখ-দল দেখে চলবেন না, নতুন ইসিকে ইনু

News Desk

‘৪ দিনেও পার হতে পারিনি, খাওয়ার টাকাও শেষ’

News Desk

Leave a Comment