আবুল কালামকে হারিয়ে কাঁদছেন স্বজনরা, কী হবে দুই শিশুসন্তানের
বাংলাদেশ

আবুল কালামকে হারিয়ে কাঁদছেন স্বজনরা, কী হবে দুই শিশুসন্তানের

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। তাকে হারিয়ে কাঁদছেন স্বজনরা। সেইসঙ্গে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে আজাদের স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানের জীবন। এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। স্বজনদের মাঝে চলছে শোকের মাতম। রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত হন আবুল কালাম।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চৌকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। ২০ বছর আগে বাবা ও মা মারা যান। এরপর বড় ভাই ও বোনদের কাছে বেড়ে ওঠেন। সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় যান। সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়েসন্তান রয়েছে। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন। ওই কাজের জন্যই প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা যাতায়াত করতেন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে যান আবুল কালাম। এরপর কাজের জন্য সেখান থেকে বের হন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। সেটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান। এরপর গণমাধ্যমের সংবাদে পরিবারের সদস্যরা মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। শুরু হয় স্বজনদের মাঝে আহাজারি। খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্বজনরা। গ্রামের বাসিন্দারাও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিকালে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চার ভাইয়ের টিনের চারটি বসতঘর রয়েছে। গ্রামে এলে একটি ঘরে থাকতেন আবুল কালাম। সেটি তালাবদ্ধ। তার বড় ভাই খোকন চৌকদারের ঘরে বসে কাঁদছিলেন বড় বোন সেলিনা বেগম; কাঁদছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিবেশীরা।

স্বজনরা বলছেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আবুল কালাম। তার এমন মৃত্যুতে দুই শিশুসন্তান এতিম হয়ে গেলো। এখন তাদের কে দেখবে, কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

বড় ভাই খোকন চৌকদার গ্রামের বাড়িতে থাকেন। পারিবারিক জমিজমা দেখাশোনা করেন। গত মাসে আবুল কালাম বাড়িতে আসেন। বড় ভাইয়ের সঙ্গে কাজ সেরে আবার ঢাকায় ফিরে যান। খোকন বলেন, ‘ওটাই যে আমার ভাইয়ের শেষযাত্রা হবে, বুঝতে পারিনি। এখন ফিরবে তার লাশ। তার স্ত্রী-সন্তানদের কে দেখবে, কী হবে তাদের। কিছুতেই বোঝাতে পারছি না। আমাদের ওপর বড় ধরনের একটা বিপদ নেমে এলো।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বড় বোন সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমার ভাই জীবনে অনেক কষ্ট করে মানুষ হয়েছে। তার আয়ে সংসার চলতো। ভাইয়ের সন্তানদের এখন দেখবে।’ 

চাচতো ভাই আলি আহমেদ চৌকদার বলেন, ‘গতকাল জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার পোস্ট দিলেন ফেসবুকে। আজ সত্যিই পালিয়ে গেলেন। নিজেকে সামলাতে পারছি না। আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে আছি।’

চাচাতো ভাই আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘আধুনিক মেট্রোরেলের অবস্থা যদি এমন নিরাপত্তাহীন হয়, তাহলে মানুষ শহরে চলাচল করবে কীভাবে? যাদের দায়িত্ব অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, আমরা তাদের বিচার চাই।’

আবুল কালামের বাল্যবন্ধু রিহিনুজ্জামান বলেন, ‘কালকে রাতেও তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। বলেছিল ভালো আছে। সময় পেলে গ্রামে আসবে। সেই মানুষটা আজ নেই। এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, ‘মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার দুর্ঘটনাটি মর্মান্তিক। এতে ঈশ্বরকাঠি গ্রামের আবু কালামের মৃত্যু হয়েছে। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। উপজেলা প্রশাসন তার পরিবারের খোঁজখবর রাখছে। সরকার তার পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। ওই পরিবারের পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসনও।’

প্রসঙ্গত, ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। বিয়ারিং পড়ে নিহত আবু কালামের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। দুপুরে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

Source link

Related posts

যাত্রী হয়রানি বন্ধে দালালমুক্ত করা হলো বেনাপোল চেকপোস্ট

News Desk

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারসহ ২০ জেলে নিখোঁজ

News Desk

উত্তরের পথে তীব্র যানজট, মানুষের ভোগান্তি

News Desk

Leave a Comment