১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের ম্যানেজার
বাংলাদেশ

১০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও আনসার-ভিডিপি ব্যাংকের ম্যানেজার

নোয়াখালীতে নামে-বেনামে ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ১০ কোটির টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আলমগীর হোসেন। ব্যাংকটির সেনবাগ ও নোয়াখালী শাখায় এ ঘটনা ঘটে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকালে শাখাগুলোতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আগে ব্যাংকের নোয়াখালী শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন আলমগীর হোসেন। এক সপ্তাহ আগে সেনবাগ শাখায় বদলি করা হয়। ২০১২ সাল থেকে এই দুই শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এই সময়ে মানুষের নামে-বেনামে ঋণের কথা বলে ১০ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছেন। দুই শাখার দুই শতাধিক গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে ঋণের নামে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন। গত শুক্রবার থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় সন্দেহ হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। তারা ঋণের কিছু কাগজপত্র যাচাই করে গরমিল পান। তখন ব্যাংকের প্রধান অফিসকে জানানো হয়। সোমবার প্রধান অফিস থেকে অডিট টিম এসে এর সত্যতা পায়।

যাদের নামে ঋণ নেওয়া তাদের কাগজপত্র যাচাই করে অডিট টিম দেখেছে, অধিকাংশ ব্যক্তির বাস্তবে অস্তিত্ব নেই। কারও এনআইডি কার্ড ভুয়া আবার কারও মোবাইল নম্বর সঠিক নয়। আবার আগে ঋণ নেওয়া গ্রাহকদের অনেকের কাগজপত্র ব্যবহার করেও আবার ঋণ দেখানো হয়েছে। এর কিছুই জানেন না ওসব গ্রাহক।

ব্যাংকের খাতায় তিন লাখ টাকা ঋণ দেখানো সদর উপজেলার মধ্যম করিমপুরের মো. আবদুল জলিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার নামে নাকি তিন লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথচ আমি কিছুই জানি না। ব্যাংক থেকে যখন আমাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে, রীতিমতো অবাক হয়েছি। আমি কোনও ঋণ নিইনি।’

আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে আরেকজনের নামে তিন লাখ টাকা ঋণ দেখানো হলেও তার হদিস পাওয়া যায়নি। ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। ওই ঠিকানায় গিয়ে ওই ব্যক্তির সন্ধান পায়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

উপজেলা আনসার ও ভিডিপির প্রশিক্ষক নিমাই চন্দ্র সরকারের নামে সাড়ে নয় লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন দেখানো হলেও এর কিছুই জানেন না নিমাই।

সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের মো. জয়নুল আবেদীনসহ অন্তত শতাধিক ব্যক্তির নামে তিন লাখ টাকা করে ঋণ দেখানো হলেও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না তারা।

বিষয়টি জেনে উদ্বিগ্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারাও। আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার সিংহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্প্রতি আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সবগুলো শাখায় যখন অডিট করাই তখনই বিষয়গুলো ধরা পড়ে। এরপরই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো অডিট করার জন্য দুই সদস্যের একটি দল পাঠায় আজ। তারা অডিট করতে এসে এর সত্যতা পেয়েছেন। এখনও অডিট কার্যক্রম চলছে। অভিযুক্ত ম্যানেজার আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, খবর পেয়ে ব্যাংকের দুটি শাখায় সোমবার বিকালে অভিযান চালায় দুদক। ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে তারাও।

দুদকের নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন নির্দেশ দিলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

Source link

Related posts

রাবির মতিহার হল: মধ্যরাতে শিক্ষার্থীকে বের করে দিল ছাত্রলীগ

News Desk

মিয়ানমারে কবে ফিরবে রোহিঙ্গারা?

News Desk

স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলো

News Desk

Leave a Comment