চট্টগ্রামের রাউজানে সড়কে বাসচাপায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা সোহেল চৌধুরী (৫০) নিহতের ঘটনায় হাটহাজারীতে বুধবার (৮ অক্টোবর) সকাল থেকে অবরোধ চলছে। এতে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল।
বুধবার সকাল ৭টা থেকে এই দুই সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজের হাজারও শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও পথচারী। বেলা সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি সড়কের প্রবেশদ্বার হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড, হাটহাজারী বাজার, হাটহাজারী কলেজ গেট, ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল একেবারে বন্ধ রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে এবং বসে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। এতে দুই সড়ক চট্টগ্রাম-রাঙামাটি এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক সম্পাদক মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী জানান, মঙ্গলবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাওলানা সোহেল চৌধুরী চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজান উপজেলার গহিরা শান্তির দ্বীপ এলাকায় একটি বাস পেছন থেকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর পর হেফাজত সদস্যরা ঘাতক চালক, গাড়ি ও লাশ নিয়ে রাউজান হাইওয়ে থানায় গিয়ে মামলা করতে চাইলে পুলিশ তাদের নিজেদের মতো করে মামলার এজাহার লেখার প্রস্তাব দেয়। এতে হেফাজত নেতারা রাজি না হয়ে মামলার এজাহারে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করতে বলেন। এতে পুলিশ অস্বীকৃতি জানিয়ে মামলা নেয়নি। যার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকেই হাটহাজারী উপজেলায় হেফাজতের অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকালের দিকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের রাউজান উপজেলার গহিরা শান্তির দ্বীপের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সোহেল চৌধুরীর জন্মস্থান সন্দ্বীপ উপজেলায় হলেও তিনি দীর্ঘ বছর ধরে পৌরসভার মেডিক্যাল গেট এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাউজানের কচুখাইন আহমদিয়া আল ইসলামিয়া আল হিকমা মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম মাওলানা সোহেল চৌধুরী মোটরসাইকেল চালিয়ে হাটহাজারী আসার পথে পেছন থেকে একটি বাস তার মোটরসাইকেলের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন মাওলানা সোহেল।
পরে স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর ঘাতক বাসের চালক জানে আলমকে (৪০) আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। বর্তমানে বাস চালক জানে আলম পুলিশ হেফাজতে আছেন।
হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এমরান সিকদার জানান, মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল এক হেফাজত নেতা মারা গেছেন রাউজানে। এর প্রতিবাদে হাটহাজারীতে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে জানার জন্য রাউজান হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ উল্লাহকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।