আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত নির্মাণাধীন চার লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১২ কিলোমিটার অংশে তড়িঘড়ি করে অস্থায়ী সংস্কার উদ্যোগ নিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টসহ সড়ক জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) টানা তৃতীয় দিনের মতো চলছে অস্থায়ী সংস্কার কাজ। সংস্কার কাজের কারণে আজও মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ একনেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়।
পরে প্রকল্পটির খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০২০ সালে ৩টি প্যাকেজ ৫১ কিলোমিটার মহাসড়কের কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এরপর করোনা মহামারি, পরে নির্মাণে বালু সংকট, সর্বশেষ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ।
এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর আওতায় আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার চার লেন মহাসড়কের একপাশ নির্মাণ করতে কেটে যায় ৮ বছর। এর মধ্যে ২০২৫ সালে ৩১ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে সড়কটি নির্মাণে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই জটিলতার কারণে কেটে যায় এক বছর। আর এই সময়ের মধ্যে বর্ষাকালে সড়কটির আশুগঞ্জ ও বিশ্বরোড অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে মহাসড়কটিতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠে।
এরই মধ্যে বুধবার (৮ অক্টোবর) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহাসড়কটি পরিদর্শনে আসছেন। উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে তড়িঘড়ি করে দুই কোটির বেশি টাকা খরচ করে মহাসড়কটির বিভিন্ন অংশে অস্থায়ী সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সড়ক সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে বিশ্বরোড গোল চত্বর এলাকায় মূল মহাসড়ক থেকে ১৫ ইঞ্চি উঁচু করে কয়েক স্তরের ইট বিছানো হয়। এতে সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিক যান বাহন চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে ভোগান্তি বাড়ে চালক ও যাত্রীদের।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে কাজ না করে হঠাৎ তড়িঘড়ি করে অস্থায়ী সংস্কার কাজ শুরু করায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজোয়ান মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি আসবে বলে অস্থায়ীভাবে কাজ করা হচ্ছে। আমরা এলাকার লোক এমন কাজ চাই না। আমরা চাই স্থায়ী কাজ।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ঢাকা সিলেট মহাসড়কের এই বিশ্বরোড অংশে জ্যাম লেগে থাকে। মানুষ খুব কষ্ট করছে। আর এখন রাষ্ট্রীয় অতিথিকে দেখানোর জন্য তারা দিন রাত কাজ করছে। আমরা শুনেছি, তিনি চলে গেলে এই ইটগুলো আবারও সরিয়ে ফেলা হবে। এতে জনগণের ভোগান্তি যেমন বাড়বে, তেমনি রাষ্ট্র ও জনগণের টাকা অপচয় হবে। সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে আগে থেকেই সড়কটি স্থায়ী মেরামতের প্রস্তুতি নিতে পারতেন।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের চালক শাহজাহান জানান, এই সড়কে আর গাড়ি চালাতে মন চায় না। বিশ্বরোডের কথা মনে হলে মাথায় যেন বাজ পড়ে। আমরা চাই, বারবার না একবারই ভালোভাবে সড়কটি মেরামত করা হোক। এতে সবারই উপকার হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, যানজট নিরসনে রাতদিন নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। স্থায়ী মেরামত হলে সমস্যা সমাধান হবে বলে মত তার।
অপরদিকে প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, সড়কটি সংস্কার করার কারণে সাময়িক জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনদুর্ভোগ এড়ানোর লক্ষেই সংস্কার করা হচ্ছে। অস্থায়ী সংস্কার কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। আশা করা যাচ্ছে, আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে চলমান সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংস্কার করা অংশের ওপর দিয়ে যান চলাচল করতে পারবে। তবে শিগগিরই স্থায়ী কাজ শুরু হবে। সে সময় বর্তমান অস্থায়ী কাজের অংশটুকু সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হবে।
এদিকে নাম না প্রকাশ করা শর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান অস্থায়ীভাবে সংস্কার কাজে দুই কোটি টাকার ও বেশি খরচ হবে। সেটি প্রকল্প ও সড়ক জনপদ বিভাগ একদম ঠিকাদারের মাধ্যমে করছেন।
অস্থায়ী কাজটি কয়েকদিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না। তবে স্থায়ী কাজ শুরু হলে ইট বালুগুলো সরিরে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার বিভাগের ২১ জেলার ২৫ হাজার যান বাহন চলাচল করে।