তিন হাজার টাকার বাইসাইকেলের নিরাপত্তায় চার হাজার টাকার তালা লাগিয়েছেন রবিউল ইসলাম উজ্জ্বল নামে এক যুবক। মূলত চুরি থেকে রক্ষা করতে ও জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য এ কাজ করেছেন তিনি।
রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা। পেশায় মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষক। পাশাপাশি নার্সারিতে চারা গাছের ব্যবসা করেন এবং বিভিন্ন বাসায় গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ করেন।
রবিউল ইসলাম ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি সাতক্ষীরা শহরে চুরির ঘটনা বেড়েছে। এ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোপূর্বে দুবার সাইকেল চুরি হয়েছিল রবিউলের। এখনও চুরি আতঙ্কে আছেন। এ অবস্থায় তিন হাজার ৫০০ টাকায় পুরাতন একটি সাইকেল কিনে সেটিকে রক্ষায় চার হাজার টাকার তালা ও শিকল কিনেছেন। তার ভাষায়, ‘সাইকেলের চেয়ে এখন তালার দাম বেশি।’
এ ব্যাপারে রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দুবার সাইকেল চুরি হয়েছে। পরে আরেকটি কেনার পর দুবার চুরির চেষ্টা হয়েছে। বাধ্য হয়ে জাহাজের শিকল ও দামি তালা কিনে সেটিকে রক্ষা করছি। দুটি হারানোর পর তিন হাজার টাকায় এই সাইকেল কিনেছি। এটি রক্ষায় তালা ও শিকল মিলে খরচ হয়েছে চার হাজার টাকা। এখন ভাবছি, সাইকেলে মিউজিক লাগাবো। যাতে স্পর্শ করলেই বেজে ওঠে। বর্তমানে বড় শিকল ও তালা দেখে আমার সাইকেল শহরের সবাই চেনে। আশপাশের কেউ একই রঙের সাইকেল চালালেই লোকজন বলে—এটা রবিউলের না? তাই এখন আর কেউ চুরি করতে পারে না।’
সাতক্ষীরা বড় বাজারের পারভেজ হার্ডওয়্যারের মালিক পিকু বরকতউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুরি ঠেকাতে গত কয়েক মাস তালা ও শিকল বিক্রি বেড়েছে। আমাদের দোকানে এক হাজার ৫০০ টাকার তালা বিক্রি হচ্ছে, আর জাহাজের শিকলের কেজি ২৫০ টাকা। মানুষ এখন সাইকেল রক্ষা করতে এগুলো কিনছে।’
তালা-শিকলের বিক্রি বাড়লেও কমছে না চুরি
সম্প্রতি একটি চুরির ঘটনায় অবাক হয়েছেন স্থানীয় লোকজন। মোটরসাইকেল চুরির পর সার্ভিসিং করে ফেরত দিয়ে গেছে চোর। সাতক্ষীরা জামায়াতে ইসলামীর জেলা কার্যালয় থেকে শহর যুব বিভাগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তালেবের মোটরসাইকেলটি সম্প্রতি চুরি হয়। চোর নিজের পরিচয় গোপন রেখে সেটি কালিগঞ্জ থানায় রেখে যায়—তাও আবার সার্ভিসিং করে ও নতুন তালা লাগিয়ে।
জামায়াতের শহর যুব বিভাগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তালেব বলেন, ‘চোরের কাণ্ড দেখে আমরা অবাক হয়েছি। মোটরসাইকেল চুরির পর থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম। ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের নাম-ঠিকানা পুলিশকে দিয়েছি। পরে মোটরসাইকেলটি থানায় রেখে যায় চোর। সেটি রেখে যাওয়ার সময় থানার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করার কথা ছিল, কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। পরে চোর আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে মাফ চেয়েছিল। বলেছিল, “ভুল করে আপনার মোটরসাইকেল নিয়েছি, আপনি জামায়াত করেন জানতাম না। আপনার গাড়ি কালিগঞ্জ থানায় রেখে এসেছি, মিটার গার্ডের মধ্যে চাবি রেখে দিয়েছি।” পরে লোক পাঠিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আসি। নিশ্চিত হওয়ার পর চোর ফোন বন্ধ করে দেয়। এমন ঘটনা সবাইকে অবাক করেছে। চোর মোটরসাইকেল সার্ভিসিং করে নতুন তালা লাগিয়ে থানায় রেখে গেলো। তবে এখনও ওই চোরকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।’
স্থানীয় লোকজন বলছেন, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনা এখন সাতক্ষীরার শহরে নিত্যদিনের ঘটনা। গত কয়েকদিনে সাংবাদিক, ব্যাংকার ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে অন্তত তিন কোটি টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। যার কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় কেউ বাসাবাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাচ্ছেন, কেউ কিনছেন শিকল, আবার কেউ স্মার্ট সিকিউরিটির কথা ভাবছেন।
জানতে চাইলে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মুকিত হাসান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুরি ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ। চোর শনাক্তের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।’