রাজশাহীতে তিন উন্নয়ন প্রকল্পে কাটা হচ্ছে ২৬৩১টি গাছ
বাংলাদেশ

রাজশাহীতে তিন উন্নয়ন প্রকল্পে কাটা হচ্ছে ২৬৩১টি গাছ

রাজশাহী মহানগরীতে গত পাঁচ বছরে উল্লেখজনকভাবে ২৬ শতাংশ সবুজ গাছ কমেছে। যার ফলে আগামীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও জলাশয় কমেছে ৩ শতাংশ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের যৌথভাবে সবুজ ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন চিত্র দেখা গেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে শীতকালীন গড় তাপমাত্রা ২.৬৬ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু এলাকায় ৪ সেলসিয়াসেরও বেশি বেড়েছে। উষ্ণায়নের প্রবণতা সবুজ স্থান এবং জলাশয়ের ক্ষতির জন্য দায়ী।

রাজশাহীতে চলমান তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পে কাটা হচ্ছে ২ হাজার ৬৩১টি গাছ। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরিতে সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হচ্ছে। এ ছাড়াও রাজশাহী ওয়াসার একটি প্রকল্পের জন্য সড়কের ধারের গাছ কাটা হচ্ছে। কাটা হচ্ছে রাজশাহী সার্কিট হাউজ চত্বরের গাছ। তবে পরিবেশবাদীরা এই গাছ কাটার বিপক্ষে। তারা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন।

তিনটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য ১ হাজার ৮৫৩টি গাছ কাটা হবে। এর মধ্যে বড়-ছোট ও মাঝারি আকারের গাছও আছে। রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্য ৭২৬টি গাছ কাটা চলমান আছে। এই গাছগুলো প্রায় ৩০ কিলোমিটারের সড়কের এক পাশ থেকে কাটা হচ্ছে। এ ছাড়া সার্কিট হাউস সম্প্রসারণের জন্য ৫২টি গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও গাছকাটা এখনও শুরু হয়নি।

কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কারণে গাছ কাটা জরুরি। গাছ না কাটলে উন্নয়ন করা সম্ভব না। অন্যদিকে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, উন্নয়নের নামে সবুজ আবরণ ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে চরম আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে। এতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে সবুজ ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাজশাহী মহানগরীতে গেলো পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে ২৬ শতাংশ সবুজ গাছ কমেছে। যে কারণে আগামীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও জলাবদ্ধতা কমেছে ৩ শতাংশ।

রাজশাহী ওয়াসার ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্পের আওতায় গাছ কাটা চলছে। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে গাছ কাটা হচ্ছে মহানগরী থেকে পবা উপজেলা হয়ে গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপনের জন্য। পদ্মা নদী থেকে মহানগরীতে পানি আনার জন্য ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার প্রকল্পের অংশ হিসেবে সঞ্চালন লাইনের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে কমপক্ষে ১১২টি গাছ কাটা হয়েছে। এবং বিভাগের অধীনে আরও ৩০৬টি গাছ কাটার জন্য নিলামে তোলা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বন বিভাগের অধীনে কমপক্ষে ৩০৮টি গাছও কাটা হবে। পবা উপজেলার আন্ধারকোঠা এলাকার কাছে সারি সারি মেহগনি, কড়ই, আকাশমণি এবং অন্যান্য প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষরোপণবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘রাজশাহী ওয়াসার জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনও বাজেট বরাদ্দ না থাকায় প্রকল্পটি সওজ জমিতে হওয়ায় গাছ কাটা জরুরি হয়ে পড়ে। ওয়াসা যখন প্রকল্পটি হাতে নেয় তখন জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। তারা সওজের জমির কথা মাথায় রেখে প্রকল্পটি পরিকল্পনা করেছিল। পাইপলাইন স্থাপনের জন্য মহাসড়কের পাশের গাছগুলো কেটে ফেলতে হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গণপূর্ত বিভাগ রাজশাহী সার্কিট হাউস কম্পাউন্ডে ৫২টি গাছ কেটে ছয় তলা ভবন, চার তলা ব্যারাক এবং একটি রান্নাঘর ব্লক তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাছগুলো ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় নিলামে তোলা হয়েছিল। যদিও শনিবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত গাছ কাটা শুরু হয়নি। পরিবেশকর্মীরা সম্প্রতি বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজশাহী মহানগরী সিলিন্দা মৌজায় সবচেয়ে বড় গাছ কাটার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০৫ একর জমির ওপর স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ১ হাজার ৮৫৩টি গাছ কাটার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। যার মধ্যে প্রায় ১ হাজারটি আম এবং ৬৮৯টি মেহগনি গাছ আছে। চলতি বছরের শুরুতে টেন্ডার ছাড়াই একজন ঠিকাদারের একই স্থান থেকে এক হাজারেরও বেশি গাছ অবৈধভাবে কেটে অপসারণের অভিযোগের তদন্তের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জাওয়াদুল হক বলেন, ‘অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ করে গাছ কাটা হচ্ছে। ক্যাম্পাসের প্রায় ৪৯ শতাংশ এলাকা সবুজ এলাকা হিসেবে থাকবে। প্রতিটি কাটা গাছের বিপরীতে আমরা একাধিক গাছ লাগাবো।’

পরিবেশকর্মী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী এখন চরম আবহাওয়ার শহর। এখানে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে। গাছ কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা রবিবার (৫ অক্টোবর) রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেবো। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছি।’

রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব নাজমুল হোসেন রাজু বলেন, ‘উন্নয়নের অজুহাতে কর্তৃপক্ষ যদি নির্বিচারে পুরনো গাছ কাটা বন্ধ না করে, তাহলে আমরা আন্দোলনে যাবো।’

Source link

Related posts

সুন্দরবনের জলদস্যু ‘আসাবুর বাহিনীর’ প্রধানসহ আটক ৮, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

News Desk

অবকাশ কেন্দ্র হচ্ছে না মুন্সীগঞ্জের পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া

News Desk

বাবার করা মামলায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার 

News Desk

Leave a Comment