সেন্টমার্টিনে পানিতে ডুবেছে দুই শতাধিক বাড়িঘর
বাংলাদেশ

সেন্টমার্টিনে পানিতে ডুবেছে দুই শতাধিক বাড়িঘর

বৈরী আবহাওয়ার কারণে টানা বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব ঘরবাড়ির লোকজন।

পানিবন্দি লোকজনের অভিযোগ, দ্বীপের একটি স্লুইস গেট বন্ধ রাখার কারণে জমে থাকছে পানি। কোনও দিকে এসব পানি নামতে পারছে না। এতে দুই শতাধিক পরিবারের কয়েক হাজার সদস্য দুর্ভোগে পড়েছেন। স্থানীয় এক বিএনপি নেতা স্লুইস গেট বন্ধ করে দেওয়ায় এ সমস্য সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সাগর উত্তালের কারণে গত দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার (০২ অক্টোবর) বিকাল ৫টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে সেন্টমার্টিনে। সমুদ্রের জোয়ারে বেড়েছে ঢেউয়ের চাপ। এতে শঙ্কা বাড়ছে দ্বীপের ১০ হাজার মানুষের। পাশাপাশি সকাল থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলাতেও শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত দুদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে দ্বীপের পাঁচ গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ির লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মূলত স্থানীয় এক ব্যক্তি পানি চলাচলের স্লুইস গেট বন্ধ করে দেওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। এ ছাড়া জোয়ারের আঘাতে ঘাটে থাকা একটি মাছ ধরা ট্রলারও ডুবে গেছে।’

দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত আছে। যার কারণে দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, নজরুলপাড়া ও কোনাপাড়া পানিতে ডুবে গেছে। এখানকার দুই শতাধিক ঘরবাড়ির লোকজন পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। মূলত সম্প্রতি সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন বিএিনপির সহসভাপতি আবুল কালাম বহু বছরের পুরোনো এসব এলাকার পানি চলাচলের একমাত্র স্লুইস গেট বন্ধ করে দেন। ফলে টানা বৃষ্টিতে পানি জমে আছে। মানুষজন পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে পানি জমায় আমার এলাকার দেড় শতাধিক ঘরবাড়ির লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে তাদের কষ্ট বেড়েছে। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় পানি যেতে পারছে না। সবগুলো এলাকায় পানি জমে আছে। স্লুইস গেট খোলার কথা বারবার বলা হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।’

ভোগান্তির কথা জানিয়ে মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা আনোয়া বেগম বলেন, ‘আমার ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। বুধবার সকাল থেকে আমরা পানিবন্দি হয়ে আছি। পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে ঘরে অবস্থান করছি। সারাদিন পরিবারের কেউ খাবার দিতে পারিনি। রান্না করার মতো অবস্থা নেই। আমার মতো এখানে অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছে। মূলত স্থানীয় বিএিনপি নেতা আবুল কালাম পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। তাকে একাধিকবার বললেও বাঁধ (স্লুইস গেট) খুলে দেয়নি।’

দ্বীপের আরেক বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘দ্বীপের দুই শতাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এখনও পানি নামেনি। মূলত স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় পানি নামছে না। আমাদের কষ্টের শেষ নেই।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএিনপির সহসভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘আমি ওই স্লুইস গেট বন্ধ করিনি। তবে আমার বাড়ির পাশের খলিল নামের এক ব্যক্তি বাড়ির সীমানা ঠিক করতে গিয়ে স্লুইস গেটটি বন্ধ করেছেন। এজন্য পানি যাচ্ছে না। আমরা সবাই মিলে স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেছি।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের কয়েকশ ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। মূলত একটি স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় এ ধরনের সমস্যা হয়েছে। পানি চলাচলের জন্য ওই স্লুইস গেট খুলে দিতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি থামলে আশা করছি, পানিও নেমে যাবে। এরপরও আমরা পানিবন্দি পরিবারগুলোর খোঁজখবর রাখছি। পাশাপাশি সমুদ্র উত্তাল থাকায় দূর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল।’

বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়ার ৩ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।

Source link

Related posts

করোনায় মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়াল

News Desk

ফেসবুক লাইভে ওসিকে পেটানোর হুমকি, সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে পুলিশের পুরস্কার ঘোষণা

News Desk

বিস্ফোরণে হতাহতদের উদ্ধারে গাউসিয়া কমিটি

News Desk

Leave a Comment