বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের কারণে কুয়াকাটায় বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। উপকূলীয় এই এলাকাকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ে গোসলে মেতেছেন হাজারো পর্যটক। বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে তাদের উল্লাস।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপূজার টানা ছুটি ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। ইতিমধ্যে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হোটেল-মোটেল বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। প্রাণ ফিরে পেয়েছে সৈকত এলাকা ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়া অনেক পর্যটকের ভ্রমণ আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে। কারণ বুধবার রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পর্যটকসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দ্বীন ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্গাপূজার ছুটিতে হাজারো পর্যটক আসায় বিক্রি মোটামুটি ভালোই চলছিল। কিন্তু আজকের বৃষ্টির কারণে বিক্রি একেবারেই কমে গেছে।’
অটোরিকশাচালক কামাল হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে বের হতে পারছি না। পর্যটকরা কোথাও যাচ্ছেন না। সবাই হোটেলে অবস্থান করছেন। আশা করেছিলাম এই ছুটিতে কিছুটা আয় হবে।’
সৈকত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পর্যটক অবস্থান করছেন হোটেল কক্ষে। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। আবার কেউ গোসল করে আনন্দ উদযাপন করছেন।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মো. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘সৈকতে এসে ঢেউ না দেখে ফিরে যাওয়া যায় না। আবহাওয়া খারাপ হলেও ঢেউয়ের সঙ্গে আনন্দ করছি। তবে বৃষ্টির কারণে দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতে পারছি না।’
আরেক পর্যটক ফারজানা আক্তার বলেন, ‘প্রথমবার কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। সমুদ্রের সৌন্দর্য দারুণ লাগছে। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে অনেক জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল ফরাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্গাপূজার টানা ছুটিতে কুয়াকাটায় রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছেন। সৈকত সংলগ্ন হোটেলগুলোতে শতভাগ বুকিং রয়েছে। এ ছাড়া আশপাশের হোটেলগুলো ৯০-৯৫ শতাংশ বুকিং হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছু হোটেলের বুকিং বাতিল হচ্ছে। কারণ বৃষ্টি থাকায় কুয়াকাটায় অবস্থানরত পর্যটকরা দূরের কোনও পর্যটনকেন্দ্রে যেতে পারছেন না। যাদের আসার কথা ছিল, তারাও আসছেন না।’
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোতালেব শরীফ বলেন, ‘পর্যটন মৌসুমে হঠাৎ নিম্নচাপের কারণে অনেকে হোটেলে বুকিং বাতিল হচ্ছে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক ভ্রমণপিপাসু আসতে চাইলেও আসতে পারছেন না। এতে হোটেল-মোটেলের ব্যবসা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় সমুদ্রসৈকত ও আশপাশে পর্যটন পুলিশ, থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন পুলিশের কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান।