নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় টোল আদায়ের নামে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। টাকা না দিলেই মারধর ও হেনস্তার শিকার হতে হয় যানবাহন চালকদের। টার্মিনাল ইজারার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইজারাদারের লোকজনের চাঁদাবাজির এ দৃশ্য দেখেও নীরব প্রশাসন। ইজারার সব শর্ত ভঙ্গ হলেও নেওয়া হচ্ছে না কোনও ব্যবস্থা। ইজারাদারের অনিয়মের সঙ্গে পৌরসভার এক কর্মচারীও জড়িত বলে অভিযোগ চালকদের।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নোয়াখালী পৌর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রধান সড়কে সিএনজি অটোরিকশা, বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন থামিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পৌর এলাকার অন্তত ১৩টি স্থানে সড়কের ওপর যানবাহন থামিয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রকাশ্যে এমন চাাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চালকরা। টাকা না দিলে বাগবিতণ্ডা, গাড়ি আটকে রাখা ও মারধর করা হয় চালকদের। এ চাঁদাবাজি বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার জানালেও ব্যবস্থা না নেয়নি বলে জানালেন চালকরা।
নোয়াখালী পৌরসভা সূূত্রে জানা যায়, পৌরসভার মালিকানাধীন সোনাপুর বাস টার্মিনালটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এক বছর মেয়াদে ২৩ লাখ টাকায় ইজারা নেন আইয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি নোয়াখালী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ইজারা কার্যকর হয়েছে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। টোল আদায়ের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে ইজারাদারকে ২০টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের অধিকাংশই মানছেন না ইজারাদার জহিরুল ইসলাম।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ইজারাদারের টোল আদায়ের জন্য সোনাপুর পৌর আধুনিক বাস টার্মিনাল, সোনাপুর জিরো পয়েন্ট, সোনাপুর ইসলামীয়া রোড, দত্তবাড়ির মোড়, মাইজদী ইসলামিয়া রোড, জজ কোর্ট সংলগ্ন রাস্তা, মাইজদী কোর্ট মসজিদ সংলগ্ন (কাউয়া রোড) এলাকা, সুপার মার্কেট সংলগ্ন পূর্ব ও পশ্চিম পাশের এলাকা, মাইজদী নতুন বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল রোড ও মাইজদী বাজার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার শর্ত অনুযায়ী, এসব স্থান ব্যতীত রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন থামিয়ে যত্রতত্র টোল আদায় করা যাবে না। কিন্তু ইজারাদারের লোকজন নির্ধারিত স্থানগুলো ছাড়াও যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো সড়কের ওপরে টোল আদায় করছেন; আবার চুক্তিপত্রের টোলের চেয়ে বেশি আদায় করছেন।
পৌরসভার দেওয়া তথ্যমতে, নির্ধারিত স্থানগুলোতে সিএনজি অটোরিকশা থেকে ১০ টাকা, ছোট বাস ২০ টাকা, বড় বাস ৩৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০ টাকা ও মোটরসাইকেল থেকে ২০ টাকা টোল নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সবগুলো যানবাহন থেকে ইজারাদারের লোকজন আদায় করছেন দ্বিগুণ টাকা। আবার ‘পৌরসভার টোল আদায়কারী’ পরিচয়ে যে পোশাকে টাকা তোলা হচ্ছে, সেটিরও কোনও অনুমোদন নেই।
হেনস্তার শিকার হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত পাঁচ জন চালক বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, রাস্তায় চলন্ত গাড়ি থামিয়ে টোলের নামে দ্বিগুণ চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে ইজারাদারের লোকজন। অতিরিক্ত টাকা না দিলেই হেনস্তা ও মারধরের শিকার হতে হয়। অনেক সময় চালকদের মারধর করে গাড়ি আটকে রাখে তারা। টাকা না দিলে দেখানো হয় পুলিশের ভয়। অথচ যে স্থানগুলো থেকে টাকা তোলা হচ্ছে সেগুলো ইজারাদারের আওতায় পড়ে না। একপ্রকার বাধ্য হয়ে চালকরা চাঁদা দিচ্ছেন। এসব নিয়ে কিছু বলার সাহসও পাচ্ছেন না তারা। আবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
ইজারার শর্ত না মেনে চালকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আইয়াস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ নিয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই।’
তবে ইজারার শর্ত ভঙ্গ করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পৌরসভার পক্ষ থেকে টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার সময় ২০টি শর্তযুক্ত করে ইজারাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেসব শর্ত যদি ইজারাদার না মানেন তাহলে আমরা যাচাই-বাছাই করে শর্ত ভঙ্গের প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’