সাজছে দেবী দুর্গা, মণ্ডপে মণ্ডপে বরণের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ

সাজছে দেবী দুর্গা, মণ্ডপে মণ্ডপে বরণের প্রস্তুতি

আর দুদিন পরই বাঙালি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসব উপলক্ষে প্রতিমা তৈরি শেষ করে এখন চলছে রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে নেওয়ার কাজ। পাশাপাশি চলছে সাজসজ্জা। এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারীর মৃৎশিল্পীরা। সেইসঙ্গে সাজানো হচ্ছে পূজামণ্ডপগুলো।

পুরোহিতরা বলছেন, ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। মহালয়ায় দেবী দুর্গার ঘট বসানো হয়। ঘট বসানোর মাধ্যমে দেবী দুর্গা বেলতলায় অবস্থান নেন। অর্থাৎ কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে মর্ত্যে (বেলতলায়) আসবেন দেবী দুর্গা। এবার দেবী দুর্গার আসার বাহন হবে গজে (হাতি), যা শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর বিদায় হবে দোলায় (পালকি), যা অশুভ লক্ষণ হিসেবে পরিচিত।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, এবার নীলফামারীতে ৮৪৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদরে ২৮২টি, ডিমলায় ৭৬টি, ডোমারে ১০৫টি, জলঢাকায় ১৮২টি, কিশোরগঞ্জে ১২২টি ও সৈয়দপুরের ৮০টি মণ্ডপে পূজা হবে। এ নিয়ে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মাঝে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দুর্গাপূজা ঘিরে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা সাজিয়ে তোলার কাজ। পাশাপাশি চলছে আলোকসজ্জার কাজও। 

মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন, মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গাদেবীর প্রতিমার সঙ্গে শোভা পাচ্ছে গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর, সিংহ, মহিষ, মহাদেব ও কার্তিকের প্রতিমা। বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমায় রংসহ অন্যান্য কাজ করছেন মৃৎশিল্পীরা।

জেলা সদরের একটি মন্দিরে প্রতিমা তৈরিসহ অন্যান্য কাজ করছেন কারিগর অতুল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে পাটের আঁশ, কাদামাটি, খড়, কাঠ, রশি আর বাঁশ দিয়ে প্রতিমাগুলো তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্রতিমা নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখন চলছে রংতুলি ও সাজসজ্জার কাজ।’

এ ছাড়া নীলফামারী পৌরসভার হাড়োয়া মহল্লায় দেবির ডাঙ্গা মন্দির, মিলন পল্লী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, শিব মন্দির, বড় বাজার হাড়োয়া পূজামণ্ডপ, কালিতলা পূজামণ্ডপ, ডাইলপট্টি পূজামণ্ডপ, সদরের ইটাখোলা হরি মন্দির, বাহালী পাড়া জমিদারবাড়ি পূজামণ্ডপ ও রামনগর পূজামণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন এসব মন্দিরে প্রতিমায় চলছে রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে নেওয়ার কাজ। পাশাপাশি আলোকসজ্জার কাজ চলছে।

দেবির ডাঙ্গা মন্দিরের সভাপতি দীপু কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের মন্দিরে গতবারের চেয়ে এবার জাঁকজমকভাবে উদযাপন হবে দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে নেওয়ার কাজ। পাশাপাশি পুরো মণ্ডপ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্গাপূজার মণ্ডপে মণ্ডপে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে আমাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আশা করছি, সবকিছু স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হবে।’

একই কথা বলেছেন মিলন পল্লী সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের পুরোহিত মিন্টু কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। এখন নকশা ও রং লাগিয়ে সুসজ্জিত করা হচ্ছে প্রতিমাগুলো। পাশাপাশি মণ্ডপের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন।’

শহরের বড়বাজার পূজামণ্ডপের পুরোহিত মহেশ গাঙ্গুলী বলেন, ‘২৮ সেপ্টেম্বর শ্রীশ্রী দুর্গাষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজা শুরু হবে। সেদিন দেবী দুর্গার ষষ্ঠাদি কল্পনারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা হবে। সেইসঙ্গে হবে দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গোৎসবে ২৯ সেপ্টেম্বর হবে মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পূজা শেষ হবে।’

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের জেলা কমিটির আহ্বায়ক প্রবীর গুহ রিন্টু বলেন, ‘এবার জেলায় ৮৪৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুর্গোৎসব উদযাপনে মণ্ডপে মণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের কার্যলায় থেকে থানাপর্যায়ে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে।

সাজছে দেবী দুর্গা, মণ্ডপে মণ্ডপে বরণের প্রস্তুতি

নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও দুর্গোৎসব উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় থাকছে। যাতে নির্বিঘ্নে শারদীয় দুর্গাপূজা উপযাপন করতে পারেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা।’

জেলা পুলিশ সুপার এ.এফ.এম তারিক হোসেন খান বলেন, ‘দুর্গাপূজা ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে ছয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিদের নিয়ে জরুরি সভা করে প্রতিটি মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর দুর্গোৎসব উপলক্ষে সরকারিভাবে জেলার মণ্ডপে মণ্ডপে ৪২৩ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডোমারের মণ্ডপগুলোতে ৪৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন, ডিমলায় ৩৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন, জলঢাকায় ৮৫ মেট্রিক টন, কিশোরগঞ্জে ৭২ মেট্রিক টন, সৈয়দপুরে ৪০ মেট্রিক টন এবং সদরে ১৪৫ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

Source link

Related posts

দেশে করোনায় চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত

News Desk

বঙ্গবন্ধুর ৪ খুনির রাষ্ট্রীয় খেতাব ও পদক বাতিল করে প্রজ্ঞাপন

News Desk

এখন থেকে নিতে হবে ৬৪ পাতার পাসপোর্ট, খরচ বাড়লো ২৩০০ টাকা

News Desk

Leave a Comment