পূর্বাচলে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা, যাতায়াতে দুর্ভোগ
বাংলাদেশ

পূর্বাচলে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা, যাতায়াতে দুর্ভোগ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের তিনটি সেক্টরে নিয়মনীতি না মেনে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছে প্রভাবশালী একটি মহল। দিনরাত বালুভর্তি গাড়ি চলাচল করায় সেক্টরগুলোর বিভিন্ন সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এমনকি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তােলনের কারণে সেক্টরগুলোর পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি জমে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এসব বালুর স্তূপ সরানোর জন্য রাজউকের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বালু না সরালে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়। তবে বালু ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজউকের নোটিশের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। উপজেলা প্রশাসন বলছে, নোটিশ দেওয়ার পর তিন মাসেও এসব বালুর স্তূপ না সরানোর কারণে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। 

গত রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাল্কহেডে করে বিভিন্ন স্থান থেকে বালু এনে পূর্বাচলের বিভিন্ন সেক্টরে রাখা হয়। বিশেষ করে নতুন শহরের পশ্চিম পাশে বালু নদীর পাড়ে ১৩ ও ১৪ নম্বর এবং পূর্ব পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ৪ নম্বর সেক্টরের সড়কের আশপাশে বালু স্তূপ করে ব্যবসা করছেন কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের নেতাদের নেতৃত্বে চলতো কয়লা ও এই বালুর ব্যবসা। ২০২২ সালে রাজউক অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছিল। এরপর থেকে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল ব্যবসা। গত বছরের আগস্টের পর থেকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা আবারও রাজউকের জমি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন ১৭টি বালুমহাল। বর্তমানে ৪ নম্বর সেক্টরে বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা অলিউল্যাহ ভুট্টো, শরিফুল ইসলাম, মিল্লাত হোসেন, নজরুল ইসলাম, আনিছুর রহমান, লুৎফর রহমান, মামুন, ফারুক হোসেন, নাঈম মাস্টার, আরিফ হোসেন এবং ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টরে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন সোহেল, সফিকুল ইসলাম, রাসেল, ইউসুফ, জুনায়েদ আহমেদ, আরিফুল ইসলাম, কাশেম, ওয়াসীম, শামীম ও সফর উদ্দিন। তারা নিজেদের বিএনপির নেতাকর্মী বলে পরিচয় দিয়ে এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে কেউ বাধা দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।

এসব সেক্টরের বাসিন্দারা বলছেন, যখন যে দল সুযোগ পায় সে দলের নেতারা প্রভাব দেখিয়ে এখানে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছেন। এসব নেতারা পাশের নদী থেকে বালু তুলেও বিক্রি করেন। সেক্টরের বিভিন্ন সড়ক ও খালি জায়গায় বালু স্তূপ করে রাখায় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। সেই জলাবদ্ধতার পানি ঢুকছে বিদ্যালয়ে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। এ ছাড়া এসব বালু ও পাথরবোঝাই ট্রাক সড়ক দিয়ে চলাচলের কারণে দেখা দিয়েছে খানাখন্দ। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্তমানে বিএনপি নেতারা এখানে বালু ও পাথরের ব্যবসা করছেন। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল রাউজক কর্তৃপক্ষ এসব অবৈধ বালুর স্তূপ অপাসরণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দেয়। উপজেলা প্রশাসন মৌখিকভাবে এসব বালুর স্তূপ সরিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের বলেছিল। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের কথা শোনেননি তারা। দেখাচ্ছেন রাজনৈতিক প্রভাব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে অলিউল্যাহ ভুট্টো বলেন, ‌‘আমরা তো অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছি না। এমনকি বালু স্তূপ করে রাখায় কারও ক্ষতিও হচ্ছে না। তাহলে কেন সরাতে হবে।’ 

তবে বালু স্তূপ করে রাখায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয় পিতলগঞ্জ ব্রাহ্মণখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীনা রানী ভৌমিক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একদিকে বৃষ্টি আরেকদিকে বালুর স্তূপ। ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাটের কারণে বালুর সঙ্গে আসা পানিতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। এসব পানি বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি আমরা। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’

ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তােলনের কারণে সেক্টরগুলোর পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো বালুতে ভরাট হয়ে গেছে

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব অবৈধ বালুমহালের কারণে সড়ক নষ্ট ও যাতায়াতসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। বালুমহাল উচ্ছেদের জন্য রাজউক থেকে চিঠি পেয়েছি আমরা। আগামী সপ্তাহে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।’

রাজউকের নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পূর্বাচলে কিছু ব্যক্তি অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করছে। আমরা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছি। রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’

রাজউকের নির্দেশনা ও তথ্যমতে, ১৯৯৫ সালে রাজধানী সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে ‘পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প’ গৃহীত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের জুলাই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রকল্পের আওতাধীন প্রধান কার্যক্রম, যেমন ভূমি উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে লেকের কিছু অংশের ও কয়েকটি সেতুর।

Source link

Related posts

শ্রমিক আন্দোলনে অচল গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

News Desk

ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে চট্টগ্রামে, সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের

News Desk

ময়মনসিংহে টাকা বিতরণ করায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীর কারাদণ্ড, বিধি লঙ্ঘন করে সমাবেশ

News Desk

Leave a Comment