১০ দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম মণ প্রতি বেড়েছে হাজার টাকা (কেজিতে ২৫ টাকা)। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। এদিকে পাইকারি বাজারে দর বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহেদুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তর জেলা ফরিদপুর। মৌসুমে এ জেলায় আবাদ হয়েছিল ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে, যা থেকে উৎপাদন হয় ছয় লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। যদিও মৌসুমে চাষি পর্যায়ে এক হাজার থেকে ১৫০০ টাকা মণপ্রতি দর পেয়েছিলেন কৃষক। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন পেঁয়াজ চাষিরা। পেঁয়াজ উৎপাদনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাষি পর্যায়ে দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকার দর পেলে তারা লাভবান হতো।
হঠাৎ ১০ দিনের ব্যবধানে ১৫০০ টাকার পেঁয়াজের মণ পাইকারি বিক্রয় হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে। যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজের এই দর বৃদ্ধির কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ করে কমেছে।
এদিকে চাষি ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে জেলার চাষিরা পাট নিয়ে ব্যস্ত সময়ে পার করায় বাজারের পেঁয়াজ সরবরাহ করছে কম। এতেই পণ্যটির চাহিদার ঘাটতি হচ্ছে।
ফরিদপুরের কানাইপুরের ব্যবসায়ী তপন কুমার বলেন, বর্তমানের বাইরের (বিদেশি) পেঁয়াজের আমদানি নেই। এ ছাড়াও দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকায় চাহিদার সঙ্গে মিলছে না। এ কারণেই দর বেড়েছে।
কথা হয় বোয়ালমারীর পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, জেলার চাষিরা এখন পাট জাগ দেওয়া, ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত বেশি। যে কারণে পাইকারি বাজারগুলোতে পেঁয়াজ কম আনছে।
একই কথা বলেন সালথার সাইফুর রহমান। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, মৌসুমে পেঁয়াজের দর পাননি চাষিরা। এখন বড় বড় চাষি ছাড়া কারও হাতে পেঁয়াজ তেমন নেই। যা আছে তা আড়তদারদের কাছে। এখন দাম বেড়েছে, লাভ করছে আড়তদাররা। আমাদের তো যা হওয়ার হয়েছে।
ফরিদপুরের কানাইপুর, সালথা, বোয়ালমারী ও নগরকান্দার বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রকারভেদে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায়। পেঁয়াজের এই লাগামহীন দরে ভোক্তাদের মাঝে অসন্তুষ্ট দেখা গেছে। ভোক্তাদের প্রত্যাশা, সরকার পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ফরিদপুর শহরের চকবাজারে কাঁচা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী সাইদা আক্তার, চাকরিজীবী রহমত উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন বলেন, হঠাৎ কেন পেঁয়াজের এত দাম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসনের দেখা উচিত। আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের এত দরে পেঁয়াজ কেনা কষ্টকর।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহরাব হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় আমরা নিয়মিত বাজার তদারকির অভিযান পরিচালনা করছি। কোনও অসাধু ব্যবসায়ী যদি অতিরিক্ত পেঁয়াজ মজুত করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

