ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বন্যাদুর্গতরা আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্ভোগে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। খাদ্য, চিকিৎসাসহ নানা সংকটে রয়েছেন বলে জানান তারা।
ফুলগাজীর আলী আজ্জম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা দুর্গতরা জানান, তিন দিনে মাত্র একবেলা খাবার পেয়েছেন তারা। তাও পাঠিয়েছে বিজিবি। আশ্রয়কেন্দ্রে নেই বিশুদ্ধ পানি, নেই চিকিৎসাসেবা বা ওষুধ, এমনকি নেই টয়লেটের ব্যবস্থাও। স্কুলসংলগ্ন দুটি টয়লেট কোমরসমান পানিতে ডুবে রয়েছে। তালাবদ্ধ বাকি টয়লেটগুলোতেও প্রবেশ অসম্ভব।
আশ্রয়কেন্দ্রের একটি রুমে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন প্রায় ৪০ জন মানুষ। এর মধ্যে দুই শিশু ও এক বৃদ্ধ গুরুতর অসুস্থ, জানান উপস্থিত আশ্রয়প্রার্থীরা। এদিকে, অন্ধকার আশ্রয়কেন্দ্রে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ অবস্থা।
শুধু ফুলগাজী নয়, পরশুরাম উপজেলার অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রেও একই দৃশ্য। দুর্গতদের অভিযোগ, কোনও কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত খাবার কিংবা চিকিৎসা পৌঁছেনি। আশ্রয়প্রার্থী এক নারী বলেন, ‘তিন দিন হইলো আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছি, একমুঠো চালও পাই নাই। ছোট ছোট বাচ্চাগুলা লইয়া কেমনে থাকি কন?’
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ফুলগাজীতে ৯৯টি এবং পরশুরামে ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা এখনও আশানুরূপ নয়। একইসঙ্গে ত্রাণ বিতরণে ধীরগতি ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পৈথরা ও জামুয়া গ্রামের মানুষজন জানান, পানিতে তাদের ঘরবাড়ি, আসবাব, চাল-ডাল সব ভেসে গেছে। হাতে টাকা নেই। ওষুধ ও খাবার কিনতেও পারছেন না। যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।
তবে দুর্গতদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বুধবার রাতে আমরা রান্না করা খাবার পাঠিয়েছি। আমাদের টিম নিয়মিত মনিটর করছে।’
মঙ্গলবার রাতে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ২০ পয়েন্টে নদী রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। ফলে জঙ্গলঘোনা, গদানগর, দেড়পাড়া ও সাহেবনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও কাঁচা রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক পরিবার রাতের আঁধারে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়।
বৃহস্পতিবার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় টানা বর্ষণ এবং ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর ফলে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৪০টি গ্রাম। টানা তিন দিন ধরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।