রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। ফুটবলের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে দেশকে করেছেন পরিচিত। সম্প্রতি নারী এশিয়ান কাপে প্রথমবারের মতো মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আর এতে অসাধারণ অবদান ঋতুপর্ণার। দেশের মুখ উজ্জ্বল করা এই কৃতী ফুটবলারের জন্য জেলা প্রশাসনের বরাদ্দ জায়গায় বাড়ি নির্মাণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। জানা গেছে, প্রতিশ্রুত বাড়ি নির্মাণের ফাইল মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে।
আরও পড়ুন: ঋতুপর্ণা ইউ বিউটি!
বিষয়টি সমাধান করে দ্রুত বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের। আর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে দ্রুত বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।
ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ির জায়গা নির্বাচনে নানা বাধা-বিপত্তির পর স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সীমানা নির্ধারণ হলেও শুরু হয়নি নির্মাণকাজ। জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভূমি বন্দোবস্তের অনুমোদনের ফাইল আটকে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ অঞ্চল হিসেবে ১৯৮৩ সাল থেকে এই অঞ্চলে ব্যক্তি পর্যায়ে ভূমি বন্দোবস্ত বন্ধ রেখেছে সরকার। বিশেষ ক্ষেত্রে বন্দোবস্তের জন্য প্রয়োজন হয় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, জেলা প্রশাসন থেকে জায়গাটি বরাদ্দের জন্য প্রয়োজনীয় নথি রাঙামাটি জেলা পরিষদে পাঠানো হয়। পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন আসলেই বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে। সমস্যা সমাধান করে দ্রুত বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি স্থানীয়দের।
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া বাজার এলাকা ও দেওয়ানপাড়া এলাকার কার্বারী (পাড়াপ্রধান) সূর্যমণি চাকমা বলেন, ‘গত মার্চ মাসে জায়গা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও পরে তা সবাই মিলে সমাধান করা হয়। তবে এপ্রিলে বাড়ির জায়গায় ঘেরাবেড়া দেওয়া হয়। পরে কিছুদিন পর কিছু ইট ও বালু আসলেও কাজ শুরু হয়নি। আমরা চাই, সমস্যা সমাধান করে দ্রুত বাড়ি নির্মাণ শেষ করা হোক।’
কাউখালীর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা চাকমা বলেন, ‘নারী ফুটবল দলকে এশিয়ান কাপে নিতে ভূমিকা রাখেন রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। এ ছাড়াও দুই বার সাফজয়ী দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। ঋতুর মতো এমন ফুটবলারের বাড়ি নির্মাণে এমন বাধা-বিপত্তি হবে সেটা চিন্তা করিনি। দ্রুত তার বাড়িটির নির্মাণ শেষ হবে, এটাই চাওয়া আমাদের।’
প্রথম সাফ জয়ের পর রাঙামাটির জেলা প্রশাসনের সংবর্ধনায় বাড়ি ও রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি পান ঋতুপর্ণা। তবে সেই কাজের এমন ধীরগতিতে হতাশ স্বজনরা।
ঋতুপর্ণা চাকমার মেজো বোন পম্পী চাকমা বলেন, ‘ঋতুকে ঘর নির্মাণের জন্য ঘাগড়া বড়াইছড়ি সড়কের পাশে একটি জায়গা দেওয়া হয়। জায়গাসহ ঘর দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কোনও খবর নেই। জেলা প্রশাসন থেকে বাড়ি নির্মাণের জন্য চার লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সেখান থেকে দুই লাখ টাকা পাওয়া গেছে। তা দিয়ে ইট ও বালু কেনা হয়েছে। আপনারাই বলেন, চার লাখ টাকায় কী ঘর হয়।’
ঋতুর বোনের স্বামী সুদীপ চাকমা বলেন, ‘ঘর তো পরের কথা, এখনও ঋতুর নামে জায়গাটা রেজিস্ট্রেশন হয়নি। দেরি হচ্ছে। কাউখালী উপজেলা থেকে বলেছে জায়গা ঘিরে রাখতে, আমরা রেখেছি।’
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘সাফজয়ী সবার বিষয়ে জেলা প্রশাসক আন্তরিক। ঋতুপর্ণার জন্য আমরা একটি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিই। এ জন্য ১২ শতক খাস জমিও নির্ধারণ করি। সেটির বন্দোবস্তের প্রস্তাব পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষ হলে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’
তিনি আরও জানান, ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি নির্মাণের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার এই ঘরের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে।