বর্ষা এলেই দুর্ভোগ বাড়ে পাহাড়ের বাসিন্দাদের
বাংলাদেশ

বর্ষা এলেই দুর্ভোগ বাড়ে পাহাড়ের বাসিন্দাদের

‘আমরা খুবই গরিব মানুষ। দিনে এনে দিনে খাই। জমানো কোনও টাকা নেই। ফলে কোনও নিরাপদ জায়গায় বাড়িঘর করতে পারিনি। বৃষ্টিতে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিই, বৃষ্টি কমলে চলে যাই। টানা বর্ষণের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছি। বৃষ্টি কমলে সেই দুর্ভোগের জীবন পাহাড়ে ফিরে যাবো। এভাবেই পাহাড়ের পাদদেশে বিশ বছর ধরে বর্ষায় দুর্ভোগের জীবন কাটাচ্ছি।’ কথাগুলো টেকনাফের পুরাতন পল্লান পাড়া বাসিন্দা গৃহবধূ সমজিদা বেগমের। তিনি পরিবারের ১৩ সদস্য নিয়ে পাহাড় ধস থেকে প্রাণে বাচঁতে পৌরসভার মায়মুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। এই বিদ্যালয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেড়শ নারী-পুরুষ-শিশু আশ্রয় নিয়েছেন।

সমজিদা বেগমের মতো মোস্তফা খাতুনও চার মাসের শিশুসন্তান নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। শিশু রুহি আক্তারকে কোলে নিয়ে তিনি বললেন, ‘যদি রাতে এখানে (আশ্রয়কেন্দ্র) না আসতাম তাহলে বেঁচে থাকতাম কিনা সন্দেহ। কেননা সকালে শুনি পাহাড় ধসে আমার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। আমার মতো অনেকের বাড়িতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি বলেন, ‘বর্ষাকালে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে হয়, রোদ উঠলে চলে যাই। এখানে আমাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন বেলা খাবার দিয়েছে। তবে আমাদের চাওয়া হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের নিরাপদ জায়গায় পুনর্বাসন করা হোক।’’

এদিকে, রবিবার দুপুরে টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন পল্লান পাড়া গ্রামে এখনও পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকিতে বসত করছে হাজারো মানুষ। টানা বৃষ্টির পরও তারা সেখানে নামছে না। ফলে প্রশাসনও বিপাকে পড়েছে।

ওই এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী আবদুল্লাহ জানান, ‘বৃষ্টি আসলে ভয়ভীতির মধ্যে থাকতে হয়। তবে চলে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করছে। কিন্তু আমাদের ঘরে ছাগল-হাঁস-মুরগি রয়েছে, সেগুলো নিয়ে চিন্তিত। তাই এখনও বাড়ি ছেড়ে যাইনি। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, মনে হয় এখানে থাকা আর সম্ভব হবে না।’

পাহাড়ে বসবাসকারী আবু ছৈয়দ বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষায় যাওয়া-আসা খুব কষ্ট। সরকারের পক্ষ থেকে যদি নিরাপদ একটা আশ্রয় দেয় তখন আর পাহাড়ে কেউ থাকবে না।’

জহুরা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ‘পাহাড় ধসে বাড়িঘর ভেঙে গেছে। পরিবারের সাত সদস্য রয়েছে। কাল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছি। বৃষ্টি কমলে এখান থেকে কোথায় ফিরবো জানি না।’

টেকনাফ পুরাতন পল্লান পাড়ার সিপিপি লিডার কুলসুমা আক্তার বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ভারী বর্ষণ হওয়ায় আমাদের সিপিপির টিম পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে আসতে বলছে। এখন পর্যন্ত দেড়শ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসলেও অনেকে পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে। বারবার বলা হচ্ছে, তাদের নিরাপদে চলে আসতে।’

তবে স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাইফুল বলেন, ‘মূলত বন বিভাগকে ম্যানেজ করে রোহিঙ্গাসহ অনেকে পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় ঘরবাড়ি করেছে। যেগুলো বর্ষা আসলে ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। যেসব মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সরিয়ে না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনসহ টেকনাফের জন্য বরাদ্দ ১৫ টন ত্রাণ দ্রুত সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীদের নিরাপদে চলে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। আর যারা আশ্রয়কেন্দ্র চলে এসেছেন তাদের তিন বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পানিবন্দি মানুষদের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।’

এদিকে, ২০১০ সালের ১৪ জুন সকাল থেকে রাতভর টানা বর্ষণে টেকনাফ উপজেলায় পাহাড় ধসে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া উখিয়ায় ২০১০ ও ১২ সালের টানা বর্ষণে পাহাড়ের ১৫ জন নারী-পুরুষ-শিশু নিহত হয়েছিল।

Source link

Related posts

তেল গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়াতে-কমাতে পারবে সরকার, সংশোধন হচ্ছে আইন

News Desk

ঘরের ভেতর হাঁটুপানি, অসহায় সিলেটের মানুষ

News Desk

নারায়ণগঞ্জ আ.লীগের আগামী নেতৃত্ব কার হাতে?

News Desk

Leave a Comment