নিম্নমানের ইট-খোয়া দিয়ে সড়ক তৈরি, ঠিকাদার বলছেন ‘ম্যানেজ করেই কাজ চলছে’
বাংলাদেশ

নিম্নমানের ইট-খোয়া দিয়ে সড়ক তৈরি, ঠিকাদার বলছেন ‘ম্যানেজ করেই কাজ চলছে’

ময়মনসিংহের ত্রিশালের ঝিলকি গ্রামে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই কাজে নিম্নমানের ইট-খোয়া ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ইট, খোয়াসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী সড়কের কাজে ব্যবহার করে অর্থ লুটপাট করছে। এ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বলছেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই কাজ করছেন তারা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ত্রিশালের ঝিলকি প্রাইমারি স্কুল মোড় থেকে আহমেদাবাদ বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পাকাকরণ কাজের বরাদ্দ এক কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। কাজটি পায় ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মেসার্স শায়ান কনস্ট্রাকশন। গত আগস্ট মাসে কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে তারা। সড়কে মাটি ফেলার পর বর্তমানে ইট-সুরকি ও খোয়া ফেলে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকরা। এসব সামগ্রী নিম্নমানের।

সড়কে নিম্নমানের ইট-খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ঝিলকি গ্রামের কৃষক শফিকুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘গ্রামের এই রাস্তা দিয়ে ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করে আমরা চলাচল করে আসছি। কাঁচা সড়কটি দিয়ে আমার বাপ-দাদারাও যাতায়াত করেছেন। সড়ক পাকা হওয়ার খবর শুনে গ্রামের সবাই খুশি হয়েছেন। কিন্তু শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে সড়কটি তৈরি করছে। এলাকাবাসীর কোনও বাধা তারা মানছে না। যে ইট, খোয়া ও সুরকি ব্যবহার করছে, তা একেবারেই নিম্নমানের। পা দিয়ে কিংবা হাত দিয়ে চাপ দিলেই ইট ভেঙে গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে। এই নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সড়কে কাজ করলে ছয় মাসও টিকবে না।’

একই এলাকার সিরাজুল হক মীর বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে কাজ চলছে। শুরু থেকেই নিম্নমানের বালু ও ইট ব্যবহার করছেন ঠিকাদার। নোংরা, ময়লা এবং ঘাসের ওপরে মাটি বালু দিয়ে ভরাট করে একেবারে নিম্নমানের ইট-সুরকি ফেলে কাজ করছেন। এই কাজে বারবার বাধা দেওয়া হলেও ঠিকাদার মানছেন না। ঠিকাদারের লোকজন গায়ের জোরে নিম্নমানের কাজ করছেন।’

একই কথা বলেছেন স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘আশা করছিলাম বাড়ির পাশে পাকা সড়ক হবে। কৃষিপণ্য খুব সহজে হাটবাজারে নিয়ে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু সড়কটি যে মানের হচ্ছে তা ছয় মাস টিকবে বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকিও দেখছি না আমরা।’

সড়কে মাটি ফেলার পর বর্তমানে ইট-সুরকি ও খোয়া ফেলে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকরা

এ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত প্রতিনিধির সঙ্গে এলাকাবাসীর বাগবিতণ্ডা লেগেই আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জোবায়ের হোসেন জনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই আমরা কাজ করছি। কাজ কিছুটা নিম্নমানের হচ্ছে এটা সত্য। এ নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের যেসব কর্মকর্তা কাজ পরিদর্শনে আসেন, তারা কাজের বিষয়ে কিছু বলেননি, এমনকি কখনও বাধা দেননি। আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাচ্ছি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রিশাল উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী সড়কে কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিম্নমানের ইট-খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ পেয়েছি আমরা। এলাকাবাসীর ওই অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Source link

Related posts

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত ৭৪৮টি বিদ্যালয়, আশ্রয়কেন্দ্র ৩৭৪

News Desk

অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র নিজেরাই লিখে আনলেন ছাত্রদলের নেতারা

News Desk

আগে জুলাই সনদ ও নতুন সংবিধান, পরে নির্বাচন: নাহিদ ইসলাম

News Desk

Leave a Comment