কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-২) মাটির দেয়াল চাপা পড়ে মোহাম্মদ আয়াস (২২) নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোরে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের ডি-৩ পশ্চিম ব্লকে এ ঘটনা ঘটেছে। আয়াস ওই আশ্রয়শিবিরের আবুল ফয়েজের ছেলে। এ সময় কামাল উদ্দিন (১২) নামের আরেক রোহিঙ্গা কিশোর আহত হয়।
পাশাপাশি ভারী বর্ষণে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অন্তত দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও চিংড়ি ঘের। প্রাণহানি রোধে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। রবিবার রাত ১১টা থেকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দুই উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, চৌধুরীপাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের ফতেহআলী পাড়া, বাহারছাড়া পাড়া, কুড়া বুইজ্জ্যাপাড়া, মুন্ডার ডেইল পাড়া গ্রামের এক হাজার পরিবারের পাঁচ হাজার মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েন। অপরদিকে, উখিয়ার হলিদিয়া পালং, রুমখাঁ, কোলাল পাড়া, চৌধুরী পাড়া ও বড়ুয়া পাড়া, বালু খালীসহ কয়েকটি এলাকার ৫০০ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। পাশাপাশি ক্যাম্পের বেশ কিছু ঘর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃষ্টির সময় সোমবার ভোর ৫টার দিকে আশ্রয়শিবিরের মাটির দেয়াল ধসে পড়ে এক রোহিঙ্গা যুবক আহত হন। আশপাশের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তাকে আশ্রয়শিবিরের বিডিআরসিএস-পিএইচসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলা হয়। সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে। আহত শিশু কামাল উদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘এ ছাড়া বজ্রাঘাতে পাঁচ রোহিঙ্গা আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। পাশাপাশি আশ্রয়শিবিরের কয়েকটি ঘরের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে বিকাল থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় পানি নামতে শুরু করেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে।’
কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে আয়াসের বোনের ঘরটি মাটির দেয়ালের। বৃষ্টিতে দেয়ালে ফাটল ধরেছিল। সেটি ধসে পড়ে আয়াসের মৃত্যু হয়।’
উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা মো. জামাল বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরের অনেক ঘরের বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
উখিয়ার বড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন বড়ুয়া বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে আমাদের গ্রাম। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে হতে থাকলে ঘরবাড়ি ডুবে যাবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।’
রুমখাঁ মনির মার্কেট এলাকার বাসিন্দা আলী হোছাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে আমাদের এলাকার কুলাল পাড়া, বড়ুয়া পাড়া, বাজার পাড়াসহ কয়েকটি পাড়া ডুবে গেছে। আমাদের গ্রামের ৩০০ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্য গ্রামের ৫০০-৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। যারা যায়নি তারা ঘরবন্দি আছে।’
হ্নীলার পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী মো. আলম বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে ভয়ে আছি আমরা। সোমবার দুপুর থেকে এখান থেকে সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন।’
রঙ্গিখালীর লামার পাড়ার বাসিন্দা নুর বেগম বলেন, ‘বাড়িতে পানি ঢুকেছে, ফলে ঘরের সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে শুধু মুড়ি খেয়ে দিন পার করেছি। কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি। আমাদের আশপাশের ১০টি পরিবার রয়েছে। সবার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।’
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারী বর্ষণে আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ৫০০ পরিবারের এক হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মূলত সীমান্ত সড়কের স্লুইসগেট দিয়ে বৃষ্টির পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ বের হতে না পারায় এ অবস্থা দেখা দেয়। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি।’
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মো. সেলিম বলেন, ‘আমার এলাকার অনেক পরিবার পানিবন্দি আছে। ড্রেন-খাল দখলের কারণে পানি চলাচলের জায়গা বন্ধ। এজন্য পানি নামছে না।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘ভারী বর্ষণে হ্নীলা ও সাবরাংয়ের কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আজ সেন্টমার্টিনে পণ্যবাহী ট্রলার যেতে পারেনি।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপের পাশে যেসব ঘরবাড়ি রয়েছে, সেগুলো ডুবে গেছে। তবে ভাটার সঙ্গে সঙ্গে পানি নেমে যাচ্ছে। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে এখনও নৌযান চলাচল বন্ধ আছে। ফলে দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের খুব সংকট দেখা দিয়েছে।’