বিষখালী নদী ভাঙনে বিলীনের অপেক্ষায় দুই বিদ্যালয়
বাংলাদেশ

বিষখালী নদী ভাঙনে বিলীনের অপেক্ষায় দুই বিদ্যালয়

বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীনের হুমকিকে পড়েছে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙা গ্রামের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিজেদের বিদ্যালয় রক্ষায় ভাঙন প্রতিরোধে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ১৯৫২ সালে ডালভাঙা বিএম মাধ্যমিক ও ১৯৪২ সালে ডালভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি দুই একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। সিডর, আয়লা, মহাসেনসহ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নদী ভেঙে এখন জমির পরিমাণ এক একরে গিয়ে ঠেকেছে। বিদ্যালয় দুটিতে প্রায় সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। প্রতি বছর কোনও না কোনও দুর্যোগে ভাঙছে নদী। নদী ভাঙনে বিদ্যালয় দুটির আশপাশে অর্ধশত বসতঘর ও বিস্তীর্ণ জনপথ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকি থাকায় বিদ্যালয় দুটির আশপাশের লোকজন বসতভিটা ভেঙে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। স্থায়ী বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যেতে পারে বিদ্যালয় দুটি। তিন থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে অন্য আর কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এতে বিদ্যালয় দুটি বিলীন হয়ে গেলে ভেঙে পড়বে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা।

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফিজা বলে, বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। আমাদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিদ্যালয় থেকে নদী অনেক কাছে, জোয়ারের চাপ বাড়লে বিদ্যালয়ে ও মাঠে পানি উঠে যায়- যার কারণে ভয়টা বেশি লাগে। টেকসই বেড়িবাঁধ না দিলে এ বছর বর্ষায় বিদ্যালয় নাও থাকতে পারে।

অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাঈম বলে, আমাদের অনেক ভয় করে, কারণ আমরা প্রায় নদীর মাঝে বসেই ক্লাস করি। জোয়ারে যখন পানি উঠে আমরা তখন ডুবে যাই, পানির মধ্যে বসেই আমাদের ক্লাস করতে হয়। আমাদের ভয় হয়, কোন সময় যেন বিদ্যালয় দুটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম বলেন, নদী বিদ্যালয় থেকে অনেক দূরেই ছিল। বিদ্যালয় দুটি বিষখালী নদীর তীরবর্তী হওয়া প্রতি বছর ভাঙতে ভাঙতে একদম কাছে চলে আসছে। বর্ষাকালে সাধারণ জোয়ারের পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয় পাঠাতে নিরাপদ মনে করেন না। তাই সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবি করেন তিনি।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, আমাদের এই বিদ্যালয় দুটি দুই একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন নদী ভাঙতে ভাঙতে বিদ্যালয়ের কাছে চলে এসেছে। বিদ্যালয়ের আশপাশে বহু বসতবাড়ি ছিল। সেসবও বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন এখন বিদ্যালয়ের ভবনের একদম কাছে। মনে হচ্ছে না ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যদি তারা স্থায়ীভাবে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন হয়তো এ বছরেই বিদ্যালয়ের একটি ভবন নদীর গর্ভে চলে যাবে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলন চন্দ্র বলেন, যখনই একটু ঝড় জলোচ্ছ্বাস হয় তখনই পানিতে তলিয়ে যায়। হয়তো আর এক বছরের মধ্যে বিদ্যালয় দুটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তিন থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যালয় না থাকায় বিলীন হলে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়বে এখানকার শিক্ষার্থীরা। তাই এই দুই বিদ্যালয় রক্ষার্থে অচিরেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা উচিত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরগুনা কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহেরাজ বলেন, ইতিমধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্যালয় দুটি রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি, ইনশাআল্লাহ অতিদ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙায় দুটি বিদ্যালয়ই নদী ভাঙনের অতি সন্নিকটে- এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও সেখানে পর্যবেক্ষণ করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলার পরে জিওব্যাগ ফেলে আপাতত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে, আশা করি অতিদ্রুত এই ভাঙন থেকে রক্ষা পাবো।

Source link

Related posts

ত্রুটি কাটিয়ে আবারও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রামপাল

News Desk

ফাইনালে ১১ মিনিট লড়াই, জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ

News Desk

কেটেছে কুয়াশা, চলছে ফেরি

News Desk

Leave a Comment