রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত যুবকের মায়ের আহাজারি, ফেরত চান লাশ
বাংলাদেশ

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত যুবকের মায়ের আহাজারি, ফেরত চান লাশ

‘ফসলি জমি বিক্রি কইরা আর সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ কইরা আমার আদরের পোলা ইয়াসিনরে বিদেশ পাঠাইলাম সংসারের ভালো হইবো কইরা। আমার হেই পোলা রাশিয়ার সেনাদলে যোগ দিয়া যুদ্ধে মারা গেছে। এখন আমগোর সংসার চলবো কেমনে আর ঋণের টাকা দিমু কেমনে। ইউনূস সরকারের কাছে একটাই দাবি, আমার পোলার লাশটা দেশে আনুক- আর আমি পোলার মুখটা একবার দেখবার চাই।’

বিছানায় শুয়ে আহাজারি করতে করতে এই কথাগুলো বলছিলেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ইয়াসিন শেখের মা ফিরোজা বেগম।

তিনি বলেন, ‘ইয়াসিনের চিন্তায় আমার বড় পোলা রুহুল পাগলের মতো হয়ে গেছে। এখন টাকা কীভাবে পরিশোধ হবে এই চিন্তায় ঘুম আসে না। ১০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে দুই পোলারে নিয়ে ছিল সংসার। ইয়াসিন বিদেশ গিয়ে সংসারের হাল ধরবে এমনটাই কথা ছিল।  কিন্তু এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।’

গৌরীপুরের ডৌহাখোলার মরিচালী গ্রামের মরহুম সাত্তার মিয়ার ছেলে ইয়াসিন শেখ। ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে কোনও পদে ছিলেন না। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় জমি বিক্রি ও সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে রাশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার মধ্য দিয়ে। রাশিয়ায় চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেন। গত ২৭ মার্চ ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় চার সহযোদ্ধাসহ মারা যান ইয়াসিন।

পরিবারের সদস্যরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তার এমন চলে যাওয়া। অসহায় পরিবারের পাশে সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে এমনটাই দাবি তাদের।

ইয়াসিনের বড় চাচা আব্দুল হেকিম জানান, গত বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ায় একটি চায়না কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করে। গত সেপ্টেম্বর মাসে অফার লেটার পেয়ে চলে যায় রাশিয়া। মস্কো থেকে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরের ওই কোম্পানিতে তিন মাস চাকরির পর অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। দেশে না হলেও বিদেশে সৈনিক হয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ হয় বলেও জানায় সে। দেশে জুলাই অভ্যুত্থানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার সাহস ও ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার মনোবল তৈরি হয় বলে জানায় সে।

ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, ইয়াসিন ছাত্র হিসেবে ভালোই ছিল।   ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর ঢাকায় এক কলেজে ভর্তি হয়। অর্থের অভাবে লেখাপড়া হয়নি। সে ছাত্রদলের একজন কর্মী ছিল। জুলাইয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয় ও ভূমিকা রাখে। সরকার পতনের পর রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ান ভাষা শিখে ইয়াসিন। পরে বন্ধুর সহায়তায় ইয়াসিন রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে চাকরি পায়। সবই ঠিকঠাক মতো চলছিল। পরে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়ে সব ওলটপালট হয়ে গেছে। চার ভাইবোনের মধ্যে দুই জন আগেই মারা গেছে। মা আর বড় ভাইকে নিয়ে ছিল তার সংসার। এই পরিবারের পাশে সরকারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার কথা জানান ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। তিনি জানান, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ইয়াসিনের গ্রামের বাড়িতে যাবেন ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

জুলাইয়ে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার মনোবল তৈরি হয় বলে জানান পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসী।

Source link

Related posts

হতদরিদ্র মানুষকে সহায়তা ও স্বাবলম্বী করে তোলা তার নেশা

News Desk

নিজের জমির ধান নিজেই কাটলেন চেয়ারম্যান

News Desk

২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৯ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৬৩৭

News Desk

Leave a Comment