সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নেভাতে জোয়ারের পানির অপেক্ষা
বাংলাদেশ

সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নেভাতে জোয়ারের পানির অপেক্ষা

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তেইশের ছিলার শাপলার বিল এলাকায় লাগা আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে মাটির ওপর শুকনো পাতায় মাঝেমধ্যেই উঠছে ধোঁয়া; জ্বলে উঠছে আগুন। তা নেভাতে কাজ করছে বন বিভাগের ২০টি ও ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট। এই আগুন পুরোপুরি নেভাতে জোয়ারের পানির অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

রবিবার বিকাল থেকে আগুন নেভানোর কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে পানি না থাকায় সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুর দেড়টা থেকে কাজ বন্ধ রেখেছে তারা। বিকালে মরা ভোলা নদীতে জোয়ারের পানি এলে আবারও কাজ শুরু হবে।

বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, এখন অল্প কিছু এলাকায় ছোট ছোট ধোঁয়ার কুণ্ডুলি দেখা যাচ্ছে। বড় কোনও আগুন নেই। তবে পানি সংকটের কারণে ঠিকমতো কাজ করা যাচ্ছে না। তাই জোয়ারের পানির অপেক্ষা করতে হচ্ছে। 

এর আগে রবিবার সকালে শাপলার বিল এলাকায় আগুন লাগে। বন বিভাগ ভিটিআরটি, সিপিজিসহ স্থানীয়দের নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রথমে বনের মধ্যে ফায়ারলাইন কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়া রোধ করার চেষ্টা করা হয়। বিকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে নদী থেকে ওই এলাকার দূরত্ব ও দুর্গম পথের কারণে সেখানে পাইপ নিতে রাত হয়ে যায়। রাতে পানি দেওয়া শুরু হলে দীর্ঘ পথের কারণে পানির গতি ছিল কম। সেই সঙ্গে ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যে পানি ছিটানো বন্ধ রাখতে হয়। রবিবার সকালে পানি ছিটানো হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ভাটার কারণে পানি ছিটানো যায়নি।

গত শনিবার দুপুরের পর থেকেই সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজি টহল ফাঁড়ি এলাকায় আগুন দেখতে পায় বন বিভাগ। তখন থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। রবিবার দুপুর ১টার দিকে সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তার আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলমতেজি টহল ফাঁড়ি থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে দুই কিলোমিটার দূরে তেইশের ছিলার শাপলার বিল এলাকা নতুন করে আগুন দেখা দেয়। যা এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবকরা আগুন নেভানোর কাজ করছেন। কেউ পানি ছিটাচ্ছেন, কেউ যেখানেই আগুন বা ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ঘটনাস্থল থেকে পানির উৎস মরা ভোলা নদী প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। এ কারণে পানি আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া নদীটির নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভাটার সময় পানি থাকছে না। ফলে শুধু জোয়ারের সময় পানি ছিটাতে পারছেন কর্মীরা। এ কারণে আগুন নেভাতে সময় বেশি লাগছে তাদের।

ফায়ার সার্ভিসের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) আবু বক্কর জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘সুন্দরবনের আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় লাগবে। খুলনা ও বাগেরহাটের ১০টি ইউনিট একযোগে কাজ করছে। পানির উৎস দূরে থাকায় নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপর নদীতে জোয়ার-ভাটার একটা ব্যাপার রয়েছে। জোয়ার-ভাটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে। আগুন যাতে বিস্তৃত হতে না পারে, সেজন্য আগুনের স্থানের চারপাশে ফায়ারলাইন করা হয়েছে। তবে রাতের বেলায় বনে কাজ করাটা চ্যালেঞ্জিং। রাতে জোয়ার যতক্ষণ ছিল আমরা পানি দিতে পেরেছি। পানি দেওয়ার ফলেই আগুনের উত্তাপ কমে এসেছে। এখানে মাটির ওপর শুকনো পাতা, মরা ডালপালার একটি স্তর রয়েছে। একটা সময় যখন ভাটা হয়ে যায় তখন পানি দিতে পারিনি, তখনই দেখা যাচ্ছে কোথাও থেকে ধোঁয়া ও আগুন বের হচ্ছে। এজন্য এখনই বলা যাচ্ছে না কতক্ষণে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

এখন অল্প কিছু এলাকায় ছোট ছোট ধোঁয়ার কুণ্ডুলি দেখা যাচ্ছে

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার বিকালে শাপলার বিল এলাকায় আগুন লাগার পর থেকে নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। রবিবার সারা রাত কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। কারণ পানির সংকট। ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যায়। ফলে পানি দেওয়া যায় না। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া দেখা যায়। কোথাও আগুন দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নেভানোর চেষ্টা চলছে। তবে এই মুহূর্তে পাম্প দিয়ে পানি দেওয়া যাচ্ছে না। বিকালে নদীতে জোয়ার এলে আবার কাজ শুরু হবে। তবে আগুন নতুন এলাকাতে ছড়ানোর তেমন শঙ্কা নেই। জোয়ার এলে আবার পানি দিতে পারলে আগুন সম্পূর্ণ নেভানো যাবে।’

তিন সদস্যের আরও একটি কমিটি

এদিকে শাপলার বিল এলাকায় আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দিপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ। ওই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এর আগে সুন্দরবনের কলমতেজী এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রবিবার চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়।

Source link

Related posts

অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন না করেই প্রকল্পের কাজ শুরু, কৃষকের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

News Desk

কতটা বদলেছে হিলারিপাড়ার মানুষের জীবনযাত্রা?

News Desk

নীলফামারীতে স্কুলের টয়লেটে শিশু ধর্ষণ

News Desk

Leave a Comment