১৬ দিন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি: রাজশাহীতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে রোগীরা
বাংলাদেশ

১৬ দিন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি: রাজশাহীতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

রাজশাহীতে টানা ১৬ দিন ধরে চলছে ইন্টার্ন চিকিৎসদের কর্মবিরতি। পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত ইন্টার্ন ও ট্রেইনি চিকিৎসকদের সঙ্গে এবার একাত্মতা প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরাও।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ পুরো মহানগরীর সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতির ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

রামেক হাসপাতালে বহির্বিভাগ, ওয়ার্ড এবং বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে থাকায় রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। রোগীরা অভিযোগ করেন, সকাল থেকে ওয়ার্ডে কোনও চিকিৎসক আসেননি। অনেক রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়ার কেউ নেই। নার্সদের কাছে গেলে তারা বলছেন, তাদের কিছু করার নেই।

সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা। লক্ষ্মীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা চিকিৎসকের সন্ধানে ছোটাছুটি করছেন, কিন্তু কোথাও চিকিৎসক বসেননি। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিরাপত্তাকর্মী হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিচ্ছিলেন, ‘আজ কোনও ডাক্তার বসবেন না, হটলাইনে ফোন করে পরে আসবেন।’ হতাশ রোগী ও স্বজনরা তখন তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

মঙ্গলবার দুপুরে মেহেরপুর থেকে রাজশাহীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা কিডনি রোগী আনোয়ারা খাতুনের ছেলে আবদুল আলিম বলেন, ‘১০ হাজার ৬০০ টাকা মাইক্রোবাস ভাড়া দিয়ে এসেছি। এসে শুনছি, ডাক্তার বসবেন না। এখন ফিরেও যেতে পারছি না।’

চুয়াডাঙ্গা থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত মেয়ে তানিয়াকে নিয়ে আসা হাসিনা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছি, ট্রেনে এসে পৌঁছেছি দুপুরে। এখন এসে শুনি, ডাক্তার বসবেন না। এটা আগেই জানালে আসতাম না।’

একই অবস্থা গ্রিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও। গ্রিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাউন্টার ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, ‘সকালে আমরা রোগীদের সিরিয়াল নিয়েছিলাম, কিন্তু চিকিৎসকরা না বসায় এখন রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’

চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হলো– এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ যেন নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে না পারেন এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দেওয়া হয়। এই দাবির পক্ষে তারা আন্দোলন করে আসছেন, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই কর্মবিরতির ফলে রাজশাহীর চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে, আর রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দফায় দফায় আল্টিমেটাম দিয়েও দাবি পূরণ না হওয়ায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। সিনিয়র চিকিৎসকরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চলবে।’

রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘শুধু জরুরি বিভাগ ও নতুন ভর্তি রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নির্ভর করছে হাইকোর্টের আসন্ন রায়ের ওপর।’

চিকিৎসকরা বুধবার (১২ মার্চ) হাইকোর্টে ঘোষণা হতে যাওয়া একটি রায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন বলেও জানান তিনি।

Source link

Related posts

আসছে মৌসুমী বায়ু, শুরু হবে বর্ষার বৃষ্টি

News Desk

টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্রিফিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবির বক্তব্য

News Desk

যশোর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও ৩ মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment