রঙিন চকে স্বপ্ন বুনছেন তারা
বাংলাদেশ

রঙিন চকে স্বপ্ন বুনছেন তারা

শিক্ষাজীবনের শুরুতেই লেখালেখির ক্ষেত্রে যে বস্তুটির সঙ্গে শিশুদের পরিচয় ঘটে সেটি হচ্ছে চক। ব্ল্যাকবোর্ড কিংবা স্লেটে লেখা জন্য একসময় চকই ছিল একমাত্র অবলম্বন। তবে কালের পরিক্রমায় চকের ব্যবহার কমে আসলেও কুষ্টিয়ায় এখনও তৈরি হচ্ছে চক।

সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়নের দহকুলা বাগানপাড়ার একদল নারী এখনও ধরে রেখেছেন অনন্য এই শিল্পটি। এখানে হাতে তৈরি হচ্ছে রঙিন চক। সদরের এই ছোট্ট গ্রামটিতে ২৮ জন নারী রঙিন চকে জীবনের স্বপ্ন বুনে চলেছেন।

একসময় চক মানেই ছিল সাদা, যা শিশুদের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়াও স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্ল্যাকবোর্ডে ব্যবহৃত হতো এই চক। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই সাদা চকও এখন হয়ে উঠেছে রঙিন।

সরে জমিনে এই চক তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় দহকুলা বাগানপাড়ার ছোট্ট কারখানায় এখন তৈরি হচ্ছে নানা রঙের চক। যা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নয়, শিল্পকর্ম ও সৃজনশীল কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। এই কারখানাটিতে ৭ জন নারী কারিগর প্রতিদিন রঙিন ও সাদা চক তৈরি করছেন। পানি ও চক পাউডার মিশিয়ে তৈরি করা হয় ঘন মিশ্রণ, যা ঢেলে দেওয়া হয় কাঠের ডাইসে। প্রতিটি ডাইস ২০মিনিটের মধ্যে তৈরি করে ফেলে চক।

রঙিন চকের জন্য আলাদা করে রঙ মেশানো হয়, যা চকগুলোকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়। সাদা, গোলাপি, লাল, হলুদ— সব রঙের চক তৈরি হয় এখানে।

চকগুলো ডাইস থেকে বের করে শুকানোর জন্য রাখা হয় পাশের খোলা মাঠে। সেখানে ২১ জন নারী ব্যস্ত থাকেন চকগুলো সাজিয়ে রোদে শুকানোর কাজে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করেন তারা। বিনিময়ে পান গড়ে ১৫০ টাকা মজুরি।

স্থানীয় মাহিনা খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আগে শুধু সাদা চক বানাতাম, এখন রঙিন চকও করছি। বাচ্চারা স্কুলে বেশি পছন্দ করে এই রঙিন চকগুলো।’

কথা হয় এই কারখানার কারিগর রোজিনা সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ফ্যাক্টরি থেকে যে হাজিরা পাই তা দিয়ে তার সংসারে অনেকটাই সহযোগিতা হয়। যদিও হাজিরা সামান্য টাকা।’ তবে বসে থাকার চেয়ে কাজ করাই ভালো বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়াও বাড়ির পাশে ফ্যাক্টরি থাকায় যেকোনও প্রয়োজনে দ্রুত বাড়ি গিয়ে কাজ সেরে আসতেও পারেন।

তৃষ্ণা খাতুন বলেন, ‘শুধু কুষ্টিয়া নয়, আমাদের তৈরি চক দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারেও যায়। খুব ভালো লাগে যখন ভাবি, আমাদের হাতে তৈরি চকে শিশুরা লেখাপড়া করছে। এটা ভেবে আমাদের খুব ভালো লাগে।’

তানিয়া বুলবুল বলেন, ‘বাড়ির কাজ শেষ করে সকাল ৯টায় ফ্যাক্টরিতে আসি। সাদা, গোলাপি, হলুদ বা লাল—যে রঙের চক দরকার হয়, তাই তৈরি করি। এখান থেকে যে হাজিরাটা পায় সেটি আমার সংসারে কাজে লেগে যায়।’

এই কারখানার চক যায় বাইরের জেলাগুলোতেও

সাদা চকের পাশাপাশি রঙিন চকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে এই চক এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, আর্ট স্কুল, এমনকি বিভিন্ন শিল্পকর্মের জন্যও এই রঙিন চক ব্যবহৃত হচ্ছে।

স্থানীয় জুনাইদ চক কারখানার মালিক আব্দুল মতিন বলেন, ‘বাজারে চকের আবেদন অনেক আগেই হারিয়েছে। যখন এই কারখানা শুরু করি, তখন বাজার প্রায় শেষ। তারপরও গ্রামের পরিবেশে কারখানাটা টিকিয়ে রেখেছি। এতে অন্তত কিছু নারীর পার্টটাইম কাজের সুযোগ হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, এখান থেকে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার চক বিক্রি হয়। এই চক কুষ্টিয়া ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হয়।

Source link

Related posts

দিনাজপুরে কমছে তাপমাত্রা, ডিসেম্বরে আসছে শৈত্যপ্রবাহ

News Desk

‘গরিবের সবজি গাড়িতে উঠলেই ধনীর হয়ে যায়’

News Desk

উত্তাল সমুদ্রে বড় বড় ঢেউয়ে পর্যটকদের উল্লাস

News Desk

Leave a Comment