কুয়াশার চাদরে ঢেকেছে দিনাজপুর, হিমেল বাতাসে বাড়ছে শীতের অনুভূতি
বাংলাদেশ

কুয়াশার চাদরে ঢেকেছে দিনাজপুর, হিমেল বাতাসে বাড়ছে শীতের অনুভূতি

তাপমাত্রা বাড়লেও শীতে জবুথবু অবস্থা উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। দুপুর হয়ে গেলেও দেখা যায়নি সূর্যের মুখ এখনও কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশ। সেই সঙ্গে হিমেল বাতাস ঠান্ডার অনুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। এতে করে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসের ফলে দিনের তাপমাত্রা কমবে ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই সঙ্গে আগামীকাল তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে। তবে দুই দিন পর থেকেই বাড়তে পারে তাপমাত্রা।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৬টায়ও একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে হিমেল বাতাসের গতিবেগ।

সকাল ৬টায় এই জেলার বাতাসের গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার। সেখানে সকাল ৯টায় গতিবেগ বেড়ে দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার। গতকাল মঙ্গলবারও এই জেলায় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২ কিলোমিটার। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সেই তুলনায় এই জেলার তাপমাত্রা বাড়লেও বেড়েছে হিমেল বাতাসের গতি। আর গত দুই দিনে সূর্য উঠেছে, প্রখরতাও ছিল। সেখানে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত মুখ দেখা যায়নি সূর্যের। এদিকে হিমেল বাতাসের কারণে জেলায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।

সকাল থেকেই চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকায় রাস্তাঘাট-হাটবাজারে লোকজনের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। বিশেষ করে মাঠে যেখানে বিভিন্ন সবজি ও বোরো ধানের চারা রোপণের জন্য জমি তৈরি করার ধুম থাকে সেখানে কৃষকদের আজ সেভাবে মাঠে দেখা যায়নি।

কথা হলে জেলা সদরের নয়নপুর এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠে এখন কৃষক না থাকার কারণ প্রচণ্ড ঠান্ডা। আসলে কৃষিশ্রমিক এই ঠান্ডার মধ্যে কাজ করতে চায় না। বাড়তি মজুরি দিয়ে কিছু শ্রমিক আসার কথা ছিল কিন্তু আসেনি। হয়তো আজকে ঠান্ডা বেশি এজন্য। এ ছাড়া ধানের জমি তৈরি করতে হবে পানির মধ্যে, এটিও একটি বড় কারণ।’

একই এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আলু ও টমেটো ক্ষেতে এই সময়ে আমরা বালাইনাশক স্প্রে করছি। কারণ, এই শীতে গাছের মধ্যে লেটব্লাইট রোগের আক্রমণ হয়। মূলত কুয়াশা বেশি হলে এই রোগের আক্রমণ বাড়ে। এজন্য আমাদের উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। শীতের চেয়ে কুয়াশা আমাদের বেশি ক্ষতি করে।’

মির্জাপুর এলাকার কৃষক খোকন বলেন, ‘আলু, টমেটো, বোরো ধানসহ বেশকিছু ফসল আছে যা এই শীতের সময় হয়। আর শীত হলে এসবের ক্ষতি হয়। আমার বোরো ধানের বীজতলা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রেখেছি। কারণ, শীত যদি ধানের চারার ডগায় পড়ে তাহলে সেই চারা মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি ব্যবস্থা নিয়েছি, কিন্তু কুয়াশা স্থায়ী হলে আমাদের জন্য সমস্যাই হবে।’

কালিতলা এলাকায় অটোচালক ফিরোজ বলেন, ‘এই ঠান্ডায় খুব খারাপ অবস্থা। মানুষজনও নাই, ভাড়াও হচ্ছে না। আবার যেভাবে বাতাস বইছে তাতে করে হাত-পা বরফ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তো কাজ করা যাচ্ছে না।’

আরেক অটোচালক স্বপন কুমার বলেন, ‘ঠান্ডায় আমাদের উপার্জন কমে যায়। নিজেরাও কাজ করতে পারি না, আবার যারা যাত্রী তাদেরও পাওয়া যায় না। ঠান্ডার মধ্যে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর থেকে বের হতে চান না। সবদিক থেকে কষ্টের সময় বলতে পারেন।’

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘সকালের চেয়ে বাতাসের গতিবেগ বেড়েছে। দিনের তাপমাত্রা কমে যাবে। আগামীকাল তাপমাত্রা আরও কমে যাবে। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই তাপমাত্রা আবার বাড়বে। হিমালয়ের কাছে একটি ঘূর্ণায়মান জলীয় বাষ্পের বলয় দেখা যাচ্ছে। ১৭ থেকে ১৮ তারিখ থেকে এই বলয়টি সক্রিয় হবে এবং প্রাচীরের মত কাজ করবে। তাতে উত্তরের হিমেল বাতাস আটকে গিয়ে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। তবে সেই বলয়ও ১৯ তারিখের মধ্যে সরে যেতে পারে এবং ২০ তারিখের পর থেকে আবারও একটু ঠান্ডা দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে চলতি মাসের শেষের আগেই কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে এই মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা আরও কমে যাবে।’

Source link

Related posts

ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নাশতা ‘জনগণের টাকায়’ কিনা জানতে তদন্ত

News Desk

রামেকর করোনার ইউনিটে ১২ জনের মৃত্যু

News Desk

সিলেটে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ৫ পুলিশ আহত, আটক ৮ বিএনপি নেতাকর্মী

News Desk

Leave a Comment