আগাম আলু চাষ করে বিঘায় লাভ ৫০-৬০ হাজার টাকা
বাংলাদেশ

আগাম আলু চাষ করে বিঘায় লাভ ৫০-৬০ হাজার টাকা

দিনাজপুরের হিলিতে ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের আলু। আবহাওয়া ভালো থাকায় পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারে আলুর ব্যাপক চাহিদা ও ভালো দাম পাওয়ায় লাভজনক হওয়ায় দারুণ খুশি কৃষক। তবে মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমানো গেলে কৃষকরা আরও লাভবান হতো বলে দাবি তাদের।

খানিকটা আগেভাগে আলু ওঠায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে আলু কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। আগামী দিনে আগাম জাতের আলুর আবাদ আরও বাড়বে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশে হঠাৎ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে আলুর বাজার। প্রশাসনিক অভিযান ও সরকারের নানামুখি পদক্ষেপ এবং ভারত থেকে আলু আমদানির পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আলুর দাম। প্রতি কেজি আলুর দাম উঠে যায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। আলুর ব্যাপক চাহিদা ও দামের কারণে লাভের আশায় আগাম জাতের আলু আবাদে ঝোঁকেন কৃষকরা।

হিলির খট্টামাধবপাড়া এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ করা হয়েছে আগাম জাতের আলু। পরিপূর্ণ হওয়ায় ইতিমধ্যেই ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলন শুরু করেছেন কৃষকরা। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি আলুর ফলন হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ মণ আলু বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকায়। এক বিঘার আলু বিক্রি হচ্ছে এক লাখ টাকার ওপরে। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এতে লাভ হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।

হিলির খট্টামাধবপাড়া গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, আমরা আগাম জাতের যে ক্যারেজ আলু সেটি লাগিয়েছিলাম। এই আলু লাগাতে আমাদের বীজ ক্রয় থেকে শুরু করে জমি প্রস্তুত রোপণ-কর্তন সবমিলিয়ে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। অন্যবারের চেয়ে এবারে আবহাওয়া ভালো থাকায় পোকামাকড় রোগ বালাইয়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে আলু পাচ্ছি ৫০ থেকে ৬০ মণ করে। সেই হিসেব করে বর্তমানে যে বাজার রয়েছে তাতে এক লাখ টাকার ওপরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এতে খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো আমাদের লাভ থাকছে। এ ছাড়া এই আলু উত্তোলনের পরে সেই জমিতে আমরা ভুট্টা লাগাবো- যাতে তেমন কোনও খরচ হবে না। আলু লাগানোর জন্য জমিতে যে পরিমাণ সার প্রয়োগ করা হয়েছে সেই দিয়ে ভুট্টা আবাদ হয়ে যাবে, বাড়তি কোনও খরচ নেই। এই কারণেই আমাদের এই অঞ্চলের কৃষকরা আলু আবাদের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন।

আলু চাষি ইয়াসিন আলী বলেন, বিগত বছরের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে এবারে আলুর দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল। আলুর বাড়তি দাম ও বেশ চাহিদার কারণে বাড়তি লাভের আশায় অন্য বারের তুলনায় এবারে খানিকটা বেশি করে আগাম জাতের আলু আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় পোকা মাকড়ের তেমন আক্রমণ ছিল না। পরিপূর্ণ হওয়ায় ইতিমধ্যেই ক্ষেত থেকে আলু উত্তোলন শুরু করা হয়েছে।

আগাম আলু চাষ করে বিঘায় লাভ ৫০-৬০ হাজার টাকা

অপর কৃষক আইয়ুব হোসেন বলেন, আমাদের দিক থেকে যতটুকু চাওয়া ছিল, সেই পরিমাণ দাম পাচ্ছি না। বর্তমানে আলুর দাম রয়েছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা, কিন্তু আমাদের আশা ছিল আড়াই হাজার টাকার মতো। এতে কাঙ্ক্ষিত লাভের চেয়ে কম লাভ করতে পারছি। সরকার যদি বাজার ব্যবস্থাটা স্থিতিশীল রাখতো, মধ্যসত্বভোগীরা যদি বাজারে প্রভাব বিস্তার করতে না পারতো তাহলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতে পারতো। আমাদের কাছ থেকে আলু কিনে নিয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করে তারা বেশি লাভ করছেন। আমরা তো মাঠ থেকে আলু তুলে স্থানীয় বাজারেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। তারা আবার অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। তারাই বেশি লাভ করছে।

কৃষক আজমল হোসেন বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার আলু আবাদে খরচ বেশি হয়েছে। বীজ আলু আগে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ছিল, এবার কিনতে হয়েছে সাড়ে চার হাজার টাকা করে। প্রতি কেজি আলুর বীজ আমাদের কিনতে হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা করে। সেই সঙ্গে সারের দাম বেশি, শ্রমিকদের মজুরি বেশি- সবমিলিয়ে খরচ অন্যবারের তুলনায় বেশি হয়েছে। প্রথমদিকে আলুর দাম ছিল, তাতে লাভ ভালোই ছিল। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় খুব একটা পড়তা নেই। প্রথমদিকে আলুর দাম ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা মণ ছিল, যত দিন যাচ্ছে দাম কমছে।

আলু উত্তোলন করা শ্রমিক নূরজাহান বেগম বলেন, সংসারের কাজকর্ম সেরে সকাল সকাল আলু আলু উত্তোলন করতে আসি। সকাল ৮টা থেকে ৯টা বাজতে বাজতেই শেষ হয়ে যায়। এর মধ্যে ৪ থেকে ৫ বস্তা করে আলু উত্তোলন সম্ভব হয়। প্রতি বস্তা আলু উত্তোলন করলে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে আমরা সংসারের বিভিন্ন কাজে লাগাই- এই কাজ করে আমাদের বেশ উপকার হয়েছে।

আগাম আলু চাষ করে বিঘায় লাভ ৫০-৬০ হাজার টাকা

আলু কিনতে আসা পাইকার আসলাম হোসেন বলেন, দেশের অন্য অঞ্চলে নতুন আলু এখনও না উঠলে হিলিতে উঠতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে এখানে আগাম জাতের আলুর আবাদ বরাবরই বেশি হয়ে থাকে। যার কারণে আমরা এখন হিলিতে আলু কিনতে এসেছি, আমার মতো অনেক পাইকার এখানে এসেছে। এখান থেকে আলু কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছি। প্রথমদিকে আলুর বাজার একটু বেশি ছিল, এখন অনেক কৃষক আলু উত্তোলন করছেন- যার কারণে বাজারে আগের তুলনায় সরবরাহ বাড়ছে। বর্তমানে আলুর বাজার চলছে প্রকারভেদে দুই হাজার থেকে ২২০০ টাকা মণ।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৪২ হেক্টর জমিতে। এবারে লক্ষ্যমাত্রার অধিক এক হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষাবাদ হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে আগাম জাতের আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে যা চলমান রয়েছে। এ বছরে আবহাওয়া ভালো থাকায় আগাম জাতের আলুর ফলন বেশ ভালো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজার মূল্য ভালো থাকায় আলুর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা বেশ খুশি। এই ধরনের বাজার মূল্য থাকলে ভবিষ্যতে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন। কৃষকরা প্রতি বিঘা জমিতে ৫৫ থেকে ৬০ মণ আলু উত্তোলন করছেন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে আলু কিনে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন। যার কারণে উৎপাদিত আলু বিক্রি নিয়ে কোনও চিন্তা নেই কৃষকদের।

Source link

Related posts

ঈশ্বরদীতে ট্রেনের ধাক্কায় একজনের মৃত্যু

News Desk

মহালছড়িতে শত বিঘার গাঁজা ক্ষেত ধ্বংস

News Desk

চট্টগ্রামে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment