Image default
ইসলাম

সন্তান জন্মের পর আজান-ইকামত দেওয়ার বিধান কী?

ইসলামে সন্তানের জন্ম একটি বিশেষ আনন্দের ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। জন্মের পরপরই কিছু সুন্নতি কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো নবজাতকের কানে আজান ও ইকামত দেওয়া। ইসলামী শিক্ষা ও ঐতিহ্য অনুসারে, নবজাতকের জীবনে আল্লাহর নাম এবং একত্ববাদের মন্ত্র শোনানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে নবজাতকের কানে আজান-ইকামত দেওয়ার গুরুত্ব, বিধান, এবং পদ্ধতি।

আজান-ইকামতের গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য

সন্তান জন্মের পর তার কানে আজান ও ইকামত দেওয়া একটি প্রাচীন সুন্নতি প্রথা, যা প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) থেকে প্রমাণিত। ইসলামের দৃষ্টিতে শিশুকে আল্লাহর আদেশে এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে পরিচিত করার জন্য এই রীতি পালন করা হয়। আজান ও ইকামতের মাধ্যমে শিশুকে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য ও ইসলামী বিধানের মৌলিক বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত করা হয়।

আজান-ইকামত দেওয়ার ইসলামী বিধান

নবজাতকের জন্মের পর ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া সুন্নত। হাদিসের আলোকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজের নাতি হযরত হাসান (রাঃ) জন্মগ্রহণ করার পর তাঁর কানে আজান দিয়েছিলেন।

হাদিসে বর্ণিত আছে:

আবু রাফি (রাঃ) বলেন, “ফাতিমা (রাঃ) এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার ডান কানে আজান দিলেন।” (তিরমিজি, হাদিস: ১৫১৪)

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, নবজাতকের কানে আজান দেওয়া সুন্নত এবং এটি আল্লাহর স্মরণ ও শিশুর ভবিষ্যতের ইসলামি জীবনের সূচনা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও কিছু হাদিসে বর্ণিত আছে:

১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, হজরত হাসান ইবন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মগ্রহণের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ডান কানে আজান ও বাম কানে ইকামত দিয়েছিলেন।’ (বায়হাকি)

২. হজরত উবাইদুল্লাহ ইবনু আবু রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হাসান ইবনু আলিকে প্রস্রাব করালে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হাসানের কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিতে দেখেছি।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহামদ, বায়হাকি)

৩. হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যার সন্তান (ভূমিষ্ঠ) হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়।’ (বায়হাকি, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)

আজান-ইকামত দেওয়ার পদ্ধতি

১. ডান কানে আজান: সন্তানের জন্মের পরপরই তাকে পরিষ্কার করে ডান কানে আজান দিতে হয়। আজানের সাধারণ পদ্ধতির মতোই “আল্লাহু আকবার” দিয়ে শুরু করে সম্পূর্ণ আজান দিতে হয়।

২. বাম কানে ইকামত: ডান কানে আজান দেওয়ার পর বাম কানে ইকামত দিতে হয়। ইকামতের শব্দগুলো একই, তবে ইকামতের শেষে “কাদ কামাতিস সালাহ” বলা হয়।

আজান-ইকামত দেওয়ার উদ্দেশ্য ও শিক্ষণীয় দিক

আজান ও ইকামতের মাধ্যমে শিশুকে আল্লাহর সাথে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে জীবনের প্রথম মূহূর্তেই ইসলামের মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়, যেমন আল্লাহর একত্ববাদ, রিসালাত ও প্রার্থনার গুরুত্ব। আজানের মাধ্যমে শিশুর কানে সর্বপ্রথম যে শব্দ শোনা যায় তা হলো আল্লাহর নাম ও তাঁর মহানতা।

উপকারিতা ও আধ্যাত্মিক প্রভাব

অনেকে মনে করেন যে, নবজাতকের কানে আজান ও ইকামত দিলে শিশুর জীবনে ইসলামের প্রতি একটি আধ্যাত্মিক প্রভাব পড়ে। এর মাধ্যমে শিশুর আত্মিক উন্নতির সূচনা হয় এবং সে আল্লাহর স্মরণে বেড়ে ওঠে। এটি এমন একটি প্রচলিত প্রথা যা নবীজী (সাঃ) এর সুন্নাহ হওয়ার কারণে পিতামাতার জন্য একটি গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

সন্তান জন্মের পর তার কানে আজান ও ইকামত দেওয়ার বিষয়টি ইসলামী সুন্নতি প্রথার অংশ। এটি নবজাতকের জন্য আল্লাহর রহমত কামনার একটি আয়োজন, যা সন্তানের জীবনের সূচনাকালেই তার অন্তরে আল্লাহর স্মরণে উদ্বুদ্ধ করে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং ইসলামী জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নবজাতকের কানে আজান-ইকামতের মাধ্যমে শোনা যায়।

Related posts

স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভাঙবে?

News Desk

নবজাতকের কানে আজান দেওয়ার ইসলামি বিধান কি ?

News Desk

অকারণে রোজা ভাঙ্গার কঠিন শাস্তি

News Desk

Leave a Comment