Image default
লাইফ স্টাইলস্বাস্থ্য

ইয়ারফোনে গান শুনতে শুনতে, না কি ‘নিঃশব্দ’ হবে শরীরচর্চার হাঁটাহাঁটি? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?

প্রাতর্ভ্রমণ বা সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়ে অনেকেই কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান বা পডকাস্ট শুনতে পছন্দ করেন। তবে এই অভ্যাস কি স্বাস্থ্যকর? চিকিৎসকরা এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন যা শরীরের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। আসুন জেনে নিই কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা এবং কেন নিঃশব্দে হাঁটা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।

কেন ইয়ারফোন দিয়ে হাঁটা উচিত নয়?
মুম্বইয়ের পিডি হিন্দুজা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী হলো “সাইলেন্ট ওয়াকিং” বা নিঃশব্দে হাঁটা। চিকিৎসক শীনা সুদের মতে, একটানা ইয়ারফোনে উচ্চস্বরে গান বা পডকাস্ট শুনে হাঁটা শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

১. শ্রবণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত: ৯০ ডেসিবেল এর উপরে দীর্ঘ সময় কোনো শব্দ শোনা গেলে শোনার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। হাঁটার সময় ইয়ারফোনে মিনিট পনেরোও যদি গান শোনা হয়, তা হলে তার প্রভাব সরাসরি মস্তিষ্কে পড়ে। ফলে কানে শোনার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং মাইগ্রেনের মতো সমস্যা বাড়তে পারে।

২. মস্তিষ্কের উপর প্রভাব: ইয়ারফোন ব্যবহারের সময় তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ সৃষ্টি হয় যা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারের কারণে মাথা যন্ত্রণা, মাথা ঘোরা, এবং বমিভাবের মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।

৩. দেহের ভারসাম্য বিঘ্নিত: ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে অন্তঃকর্ণে প্রভাব পড়তে পারে, যা শরীরের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। ফলে দীর্ঘক্ষণ সশব্দে ইয়ারফোনে গান শুনলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং মাথা ঘোরা শুরু হয়।

নিঃশব্দে হাঁটার সুবিধা কী কী?
সাইলেন্ট ওয়াকিং বা নিঃশব্দে হাঁটা শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুফল দেওয়া হলো।

১. মনোযোগ বৃদ্ধি এবং মানসিক শান্তি
মনোবিজ্ঞানী অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, প্রকৃতির মাঝে নিঃশব্দে হাঁটলে মনোযোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলে এবং পাখির ডাক, বৃষ্টির শব্দ শুনলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে। একটানা উচ্চস্বরে গান শুনলে মস্তিষ্কের উপর বাড়তি চাপ পড়ে, যা নিঃশব্দে হাঁটার সময় প্রকৃতির সাথে থাকার মাধ্যমে দূর হয়।

২. ডিজিটাল ডিটক্স
মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকাও শরীর এবং মনের জন্য প্রয়োজন। প্রতিদিন আমাদের ব্যস্ততায় এই বৈদ্যুতিন যন্ত্রগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তবে হাঁটার সময় ফোন ও ইয়ারফোন থেকে দূরে থাকলে তা “ডিজিটাল ডিটক্স” হিসেবে কাজ করে। এর ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে এবং মন ভালো থাকে।

৩. দুশ্চিন্তা ও নেতিবাচক চিন্তা দূর করে
দৈনন্দিন জীবনের চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় নিঃশব্দে হাঁটার মাধ্যমে। শরীরচর্চার সময় ফোনে গানের পরিবর্তে প্রকৃতির শব্দ শুনলে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূরে সরে যায়। হাঁটার সময় প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।

৪. মনের শান্তি ও অনিদ্রা দূর
নিঃশব্দে হাঁটার সময় মন শান্ত থাকে, যা রাতে ভালো ঘুমের সহায়ক। অনিদ্রাজনিত সমস্যা এবং অবসাদও কমে যায়। হাঁটার সময় শরীর এবং মনের ওপর কোনো চাপ না থাকায় এতে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শরীরে সুস্থতার অনুভূতি এনে দেয়।

কীভাবে নিঃশব্দে হাঁটার অভ্যাস করবেন?
ইয়ারফোন এড়িয়ে চলুন: ইয়ারফোন ব্যবহার কমিয়ে রাখুন, বিশেষ করে হাঁটার সময়। তাতে শরীরের ওপর কম চাপ পড়বে এবং প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন সহজ হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটুন: পার্ক বা খোলা মাঠে হাঁটার সময় চারপাশের প্রকৃতিকে অনুভব করুন, যা শরীর ও মনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়।

মোবাইল থেকে দূরে থাকুন: হাঁটার সময় মোবাইল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এতে মানসিকভাবে প্রশান্তি অনুভব করবেন এবং শরীরও ভালো থাকবে।

সুতরাং, পরের বার হাঁটতে বেরোনোর সময় ইয়ারফোন বা ফোনের পরিবর্তে প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করুন। এতে শরীরচর্চার সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে এবং শরীর ও মন উভয়েই শান্তি পাবে।

Related posts

ফ্ল্যাশ: মেনোপজ আর কলঙ্কজনক নয়

News Desk

সবচেয়ে বড় কোভিড ভ্যাকসিন অধ্যয়ন হৃদপিন্ড এবং মস্তিষ্কের অবস্থার সামান্য বৃদ্ধির সাথে লিঙ্ক করেছে

News Desk

10 tips to live to be 100: ‘Far more than wishful thinking,' say longevity experts

News Desk

Leave a Comment