দীর্ঘ বন্যার কবলে কুড়িগ্রাম, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
বাংলাদেশ

দীর্ঘ বন্যার কবলে কুড়িগ্রাম, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

প্রায় দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্যায় ধুঁকছেন কুড়িগ্রামের হাজারো পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। এর মধ্যে নতুন করে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে পানি বাড়তে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ অবস্থায় জেলার পানিবন্দি মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুর ১২টায় পাওয়া প্রতিবেদনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তিন নদীর পানি ৫ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, উলিপুরের হাতিয়া এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার এবং কুড়িগ্রাম শহরের সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টা থেকে এসব নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের ধরলা অববাহিকায় ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা উত্তরাঞ্চলের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময় ধরলা ও দুধকুমার নদের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্য বলছে, চলমান বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৫৫ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের দাবি, পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক।

বুধবার (১০ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধে আশ্রয় নেওয়া লোকজনও বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন। গবাদিপশু নিয়ে দুর্ভোগের মাত্রা চরমে পৌঁছেছে।

সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটা চরের বন্যাকবলিত অনেক পরিবার গবাদিপশু নিয়ে গোয়াইলপুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রলাকাটার চর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এক সপ্তাহ ধরে মানুষ ও পশু মিলে গাদাগাদি করে সেখানেই বসবাস করছেন। কিন্তু বৃষ্টি তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।

ওই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা মামুন বলেন, ‘চরের মানুষের জীবন আসলে কঠিন। আমরা খুব কষ্টে আছি। একদিকে ভাঙন আরেকদিকে বন্যা। গরু-ছাগল নিয়া একসঙ্গে থাকতে হইতেছে। থাকার পরিবেশ নাই। তারপরও বাধ্য হয়া আছি।’

এক সপ্তাহ ধরে স্কুলঘরে আশ্রয় নিয়ে থাকা এই বানভাসি বলেন, ’২০-২৫টা পরিবার স্কুলে আশ্রয় নিছি।  যে বৃষ্টি শুরু হইছে তাতে অবস্থা আরও খারাপ। চুলাও ভিজি গেইছে। আইজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিবারগুলা রান্নাও করতে পারে নাই।’ ওই চরে পানিবন্দি পরিবারগুলো সহায়তার অভাবে খাদ্য কষ্টে আছে বলেও জানান তিনি।

মানুষ ও পশু মিলে গাদাগাদি করে বসবাস (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

ওই এলাকার ওয়ার্ড সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রলাকাটার চর, গোয়াইলপুরীর চর আমার ৮ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত। প্রায় ২ সপ্তাহ ধইরা এই ওয়ার্ডের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। আবার পানি ফিকতাছে। ভাঙনকবলিত ৪০টি পরিবার একবার খাদ্য সহায়তা পাইছে। আর কোনও পরিবার কোনও সাহায্য পায় নাই। আমি বারবার চাইলেও কোনও বরাদ্দ পাই নাই।’

বন্যায় জেলার লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। পরিস্থিতির অবনতি হয়ে বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্লাবিত এলাকার মানুষজন। আশ্রয়, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে দিন যাপন করছেন বানভাসিরা। এ অবস্থায় প্লাবিত এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আশঙ্কাজনক এমন পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তাই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দু-একটি বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগ ছাড়া ত্রাণ বিতরণে বড় কোনও উদ্যোগ নেই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আমরা ত্রাণ সহায়তা বিতরণ জোরদার করেছি। যেসব স্থানে সহায়তা পৌঁছায়নি সেখানেও পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়া প্রশ্নে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। দুর্গত মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন।’

Source link

Related posts

মুক্তারপুর হাটে প্রতিদিন আড়াই কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি

News Desk

অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে পঞ্চগড়ে সড়ক অবরোধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

News Desk

ভাসানচর পৌঁছেছে আরও ১৬৫৫ রোহিঙ্গা

News Desk

Leave a Comment