দুধকুমারের পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই, কুড়িগ্রামে চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা
বাংলাদেশ

দুধকুমারের পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই, কুড়িগ্রামে চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা

ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এ ছাড়া অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার দিকে ছুটছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এদিকে, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে জেলার রাজারহাট উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পাউবো কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত এলাকার অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনের হুমকিতে আছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্থানীয় বাজারসহ অন্তত শতাধিক পরিবার।

পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমারের উজানে ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম (ধরলা ব্রিজ) পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ক্রমশ বিপদসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ধীরগতিতে বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে এর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ও বামনডাঙা ইউনিয়নের বেশ কিছু চরাঞ্চলে বাড়িঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে ওইসব এলাকার সবজি ক্ষেত।

রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ফান্দেরচর গ্রামের শহিদুল বলেন, ‘দুধকুমারের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বাড়িঘরে পানি প্রবেশ না করলেও চারপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে বাড়িঘরে প্রবেশ করবে।’

ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বন্যার চোখরাঙানির সঙ্গে তিস্তার তীরে শুরু হয়েছে ভাঙন। রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় তিস্তার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাড় ভেঙে একের পর এক বসতভিটা আর আবাদি জমি বিলীন করছে আগ্রাসী এই নদী। ভাঙনের কাছাকাছি নিরুপায় দিনযাপন করছেন অনেক দিনমজুর পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সেফারুল ইসলাম জানান, ভাঙনের কবলে পড়ে বসতি সরিয়ে নিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। ভাঙন হুমকিতে আছে কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোনার জুম্মা এলাকা থেকে মৌলভীপাড়া পর্যন্ত তীরবর্তী শতাধিক পরিবার রয়েছে ভাঙনের হুমকিতে।

বিপদসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দুধকুমারের পানি

তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরিবারগুলো অনিশ্চয়তায় মধ্যে আছে।’

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কয়েকটি স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করে সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।’

Source link

Related posts

খুলনা মেডিক্যালে ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু

News Desk

ঈদ ঘিরে জমজমাট ভৈরবের জুতাশিল্প, ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা

News Desk

গলাচিপায় ১টি ঘরের আশায় অসহায় পরিবার

News Desk

Leave a Comment