যশোরের ঝিকরগাছার নাসরিন সুলতানা। বয়স মাত্র ২৫ বছর। এখনো স্নাতকোত্তরের ছাত্রী তিনি। তবে এর মধ্যেই গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। পরিবারকে সহায়তার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ও করছেন। তাঁর এই এগিয়ে চলা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে আশপাশের গ্রামের নারীদের কাছে।
আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন নাসরিন। নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এই বয়সে আমি স্বাবলম্বী, তাই অন্য নারীরা আমাকে দেখে উৎসাহিত হন।’
আপনি নিজেকে স্বাবলম্বী মনে করছেন কেন—সে প্রশ্ন প্রথম আলোর পক্ষ থেকে করা হয়েছিল নাসরিন সুলতানাকে। তখন হাসতে হাসতে তিনি বললেন, ‘দুই শতক জায়গায় আমার কেঁচোর খামার আছে। উলম্ব বাঁশের মাচায় ১৬০টি চাড়িতে এ খামার বানিয়েছি। খামারে নিজস্ব পদ্ধতিতে সার উৎপাদন করছি। ২৫ শতক জায়গায় করেছি সবজি খেত। ছাগল আছে ১০টি। একবার ৬৮ হাজার টাকার শুধু ছাগল বিক্রি করেছিলাম। আমার সঞ্চয় আছে ছয় লাখ টাকার বেশি। আমি এখন অন্য নারীদের কৃষি নিয়ে প্রশিক্ষণ দিই। ৪০ জন নারী আমাকে দেখেই কেঁচোর খামার করেছেন। আর আমি এই কাজগুলো তো করছি পড়াশোনার পাশাপাশি।’
নাসরিন বললেন, এসএসসি পাসের পর পড়াশোনার জন্য বাড়ি থেকে কোনো টাকাপয়সা নেননি। জৈব সার বিক্রি বা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে যে টাকা পেয়েছেন, তা দিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। এখন তাঁর কৃষিকাজ থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা হাতে থাকে। সরকারের কৃষি অফিসের কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, উলাসী সৃজনী সংঘসহ সবার কাছ থেকে বিভিন্নভাবে নাসরিন সহায়তা পেয়েছেন উল্লেখ করে বারবার কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে নিজের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প বলেন নাসরিন সুলতানা। জানালেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় পরিচালিত উলাসী সৃজনী সংঘ নামের এনজিওর মাধ্যমে প্রায় এক বছর ধরে তিনটি ইউনিয়নের ১ হাজার ৯২০ জন নারীকে নিয়ে গঠিত বিভিন্ন দলের সঙ্গে কাজ করছেন। এই নারীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি এখন ‘নারী সামাজিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠনের উপজেলা পর্যায়ের কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপজেলা পর্যায়ে ‘জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
কৃষিক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আজ বুধবার ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬’ পেয়েছেন নাসরিন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। নাসরিন পেয়েছেন রৌপ্যপদক।

