নওগাঁ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যাচ্ছেন। যাত্রাপথে তল্লাশির নামে পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছে ও হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতা-কর্মীদের। তবে পুলিশের দাবি, সমাবেশে যেতে কাউকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ।
নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা থেকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক ছাড়াও রাজশাহীর বাগমারা, গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক শহর দিয়ে রাজশাহী শহরে প্রবেশ করা যায়।
সমাবেশে যোগ দিতে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করা বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, সড়কপথে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে রাজশাহীতে যাওয়ার পথে পুলিশ তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে। রাজশাহী অভিমুখী ব্যক্তিদের পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুই হাজারের বেশি মোটরসাইকেলে করে চার-পাঁচ হাজার বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থক রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। তাঁদের পথে পথে তল্লাশিচৌকিতে বাধা দেওয়া হয়। গাড়ির কাগজপত্র না থাকার অজুহাতে অনেককে মামলা দেওয়া হয় এবং অনেককে উল্টো পথে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
মোটরসাইকেলে করে সমাবেশে যোগ দিতে রাজশাহীতে যাচ্ছিলেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিএনপি কর্মী সাইদুর রহমান ও আবদুস সালাম। যাওয়ার পথে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটা মোড়ে তল্লাশিচৌকিতে পুলিশ তাঁদের মোটরসাইকেলটি থামিয়ে দেয়। পরে কাগজপত্র দেখে তাঁদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।
সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস বন্ধ। তাই ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে করেই আমরা রাজশাহীতে যাচ্ছি। বদলগাছী থেকে আসার পথে এ পর্যন্ত তিন জায়গায় পুলিশ গাড়ির কাগজপত্র চেক করেছে। প্রতিটি চেকপোস্টে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় হচ্ছে। রাজশাহী পর্যন্ত আর যে কতগুলা চেকপোস্ট আছে আল্লাহই জানে। অ্যাগলা হয়রানি ছাড়া আর কিছু লয়। অথচ আওয়ামী লীগের প্রোগ্রাম হলে অ্যাগলা চেকপোস্ট কিছুই থাকত না। গাড়ির কাগজপত্রও চেক হতো না।’
নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বাস বন্ধ থাকায় বিএনপির কর্মীরা মোটরসাইকেল ছাড়াও অটোরিকশা ও ইজিবাইকে করে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী যাচ্ছেন। কিন্তু পথে পথে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে তল্লাশিচৌকির নামে বিএনপির কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। রাজশাহী অভিমুখী আমাদের অনেক কর্মীকে বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশ ফিরিয়ে দিয়েছে।’
বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাজশাহীতে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। কাউকে রাজশাহী শহরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।
নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, পরিবহন ধর্মঘট শুরুর আগেই অনেক নেতা-কর্মী রাজশাহীতে পৌঁছে গেছেন। এ ছাড়া ধর্মঘট উপেক্ষা করে এবং শত বাধা সত্ত্বেও নওগাঁ থেকে এ পর্যন্ত ২৫–৩০ হাজার বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থক রাজশাহীতে পৌঁছেছেন। সমাবেশ শুরুর আগেই আজ রাতে ও আগামীকাল দুপুরের মধ্যে আরও ১৫–২০ হাজার নেতা-কর্মী রাজশাহীতে যাবেন। নওগাঁ হচ্ছে বিএনপির ঘাঁটি। কোনো বাধাবিপত্তি জনস্রোত ঠেকাতে পারবে না।