Image default
জানা অজানা

মঙ্গলে অ্যালিয়েন আর মর্ত্যে মনোলিথ, এ যেন আজব ধাঁধা!

আমেরিকা থেকে ইউরোপ, এখানে সেখানে আচমকাই ভূমি ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে ধাতব স্তম্ভ, যার গালভরা নাম মেটাল মনোলিথ! তবে কি ভিনগ্রহের প্রাণীরা এসে বানাচ্ছে এসব? এর মধ্যেই আবার ইজরায়েলের প্রাক্তন মহাকাশ নিরাপত্তা প্রধানের দাবি, আমেরিকার সঙ্গে যোগ রয়েছে এলিয়েনদের। সব কি নিছকই কাকতালীয়?

একদিকে বিশ্বের নানা প্রান্তে টপাটপ আকাশের দিকে মুখ তুলে দাঁড়িয়ে পড়ছে ধাতব স্তম্ভ। নাম তার বেশ সাজানো গোছানো—মেটাল মনোলিথ। অন্য দিকে, তার কিছু দিন পরেই ইজরায়েলের প্রাক্তন মহাকাশ নিরাপত্তা প্রধান হাইম এশেদ দাবি করে বসলেন, বেশ কিছু আগে থেকেই আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এলিয়েনদের। বলেন কী মিয়া!

দাবিটা ওই টুকুতে থেমে গেলে তা-ও চলত, এশেদ আরও এগিয়ে বলেন, মঙ্গল গ্রহের কোন গভীরে নাকি বেস ক্যাম্প তৈরি করে ফেলেছে আমেরিকা ও ভিনগ্রহী জীবরা মিলে। সংগঠনটিকে ‘গ্যালাকটিক ফেডারেশন’ বলা হয়। এ ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি সর্বস্ব জানেন। শুধু তাঁর পারিষদরা বারণ করেছে, এ সব শুনলে মানুষের মনে হিস্টিরিয়া তৈরি হবে, তাই ট্রাম্প ঘোষণা করেননি।

তবে কি, ওই যে রহস্যময় ধাতব স্তম্ভগুলো এ দিক-ও দিক দাঁড়িয়ে পড়ছে, সেগুলো সব এলিয়েন-বাবাজিদের কীর্তি? সেই যে ‘২০০১: এ স্পেস ওডিশি’-তে দেখিয়েছিল লম্বা মেটাল মনোলিথ। এলিয়েনদের তৈরি ছিল সে সব। আর্থার সি ক্লার্কের গল্প ও স্ট্যানলি কুব্রিকের সিনেমায় প্রথম আত্মপ্রকাশ ধাতব স্তম্ভের। ক্লার্ক পরে ওই উপন্যাসের সিকুয়েল লিখেছিলেন ১৯৮২ সালে—‘২০১০: ওডিশি টু’। দুই উপন্যাস মিলে দেখা গিয়েছিল মনোলিথ ছড়িয়ে রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের নানা জায়গায়। এই মনোলিথ ছিল এক ধরনের যন্ত্র। যার সংস্পর্শে এসে বুদ্ধির বিকাশ হয়েছিল শিম্পাঞ্জি-জাতীয় আদিম মানুষের। তারা পাথরকে যন্ত্র বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে শিখেছিল এই মেটাল মনোলিথের কাছে আসার পরেই।

প্রথম মনোলিথটি আবিষ্কার হয় ১৮ নভেম্বর। আমেরিকার উটাহ-প্রদেশের সরকারি বায়োলজিস্টরা হেলিকপ্টারে ঘুরে ঘুরে ভেড়া গুনছিলেন একটি সমীক্ষার জন্য। হঠাৎই তাঁদের চোখে পড়ে চকচকে ধাতব স্তম্ভ। নেমে পরীক্ষা করতে যান তাঁরা। রহস্যময় বস্তুটির ছবি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়ে যায় নানা জল্পনা। তারপর ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা যায় একই রকম ধাতব স্তম্ভ। আমেরিকা ছেড়ে অচিরেই এলিয়েন-তত্ত্ব পাড়ি দেয় ইউরোপে। রোমানিয়ার পাহাড়ে মেটাল মনোলিথের গায়ে আবার ছিল রহস্যময় আঁকিবুকি। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, প্যারিসেও উঁকি দিতে থাকে মেটাল মনোলিথ। এরই মাঝে হঠাৎ দিন চারেক পর ভ্যানিশ হয়ে যায় উটাহ-র মনোলিথ। পরে ক্যালিফোর্নিয়ারটিও।

মঙ্গলে অ্যালিয়েন

সব মিলিয়ে রহস্য বেশ জম্পেশ। তবে এলিয়েন তত্ত্বের পাশাপাশি আলোচনা চলছিল আরেকটি সম্ভাবনা নিয়ে। কোনও বড় সংস্থা হয়তো বিশ্বজুড়ে তাদের প্রোডাক্টের মার্কেটিংয়ের অভিনব স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে। কিন্তু শেষে দেখা গেল তা নয়। অন্তত আমেরিকার মনোলিথের কারণ এখন পরিষ্কার। কারণ, সে রহস্য সমাধান হয়ে গিয়েছে। এই মেটাল মনোলিথ আসলে আর্ট ইন্সটলেশন।

‘দ্য মোস্ট ফেমাস আর্টিস্ট’ নামের একটি আধুনিক আর্টিস্টদের সংস্থা জানিয়েছে উটাহ ও ক্যালিফোর্নিয়ার মেটাল মনোলিথ বসিয়ে ছিলেন তাঁরা। তাঁরাই সেগুলি সরিয়ে নিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘোষণার সময় দেখা গিয়েছে, কোনও আর্টিস্ট পালিশ করছেন স্তম্ভটি, কখনও পোস্ট করা হয়েছে মনোলিথ সরিয়ে নেওয়ার ছবি। তার সঙ্গে ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপন! শিল্পীদের সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, আপনি কি চান এ রকম মেটাল মনোলিথ আপনার বাড়ির বাগানে বসাতে? তা হলে লাগবে ৪৫ হাজার ডলার। হ্যাঁ ঠিকই দেখছেন। অঙ্কটা ৪৫ হাজার ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩৮,১৩,৮১৩.৪৫ টাকা।

আমেরিকার মনোলিথের রহস্য মিটলেও ইউরোপেরগুলো নিয়ে কারও কোনও বক্তব্য নেই। কেউ বলছেন, আমেরিকান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এ রকম কেউ ওই কাজ করেছেন। অথবা, ইউরোপের অন্য কোনও শিল্পী আমেরিকার দেখাদেখি মনোলিথ বানিয়েছেন। কারণ, বিভিন্ন জায়গার মনোলিথগুলির আকার বিভিন্ন।

কন্সপিরেসি থিওরিতে বিশ্বাস করেন এ রকম কিছু মানুষ অবশ্য ইজরায়েলের প্রাক্তন মহাকাশ নিরাপত্তা প্রধানের দাবি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে এশেদের বক্তব্য নিয়ে আমেরিকান সরকার বা ইজরায়েল সরকার কোনও মন্তব্য করেননি। নাসাও সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। কেন হঠাৎ এশেদ এই এলিয়েন তত্ত্ব প্রচার করতে গেলেন, সে বিষয়টিও ধোঁয়াশা। তবে ইজরায়েলের খবরের কাগজ থেকে জানা গিয়েছে এশেদ একটি বই লিখেছেন সম্প্রতি। বিষয় মহাকাশ গবেষণা। তার প্রচারের জন্যই এই অদ্ভুত দাবি।

এলিয়েনের স্বপ্নে বিভোর যাঁরা, তাঁরা অবশ্য বেশ হতাশ ইজরায়েলের খবরের কাগজের এই খোলসায়।

Related posts

মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদের ইতিহাস

News Desk

প্যালিনড্রমিক সংখ্যা (PALINDROMIC NUMBER) কি?

News Desk

ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনী

News Desk

Leave a Comment