দীর্ঘ ৫৬ বছরের শিরোপা-খরা ঘুচানোর লক্ষ্যে এবার দুর্বার গতিতেই ছুটে চলছে ইংল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত করে তারা। শুধু তাই নয়? এবারের আসরে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে থাকা দলগুলোর মধ্যে পরাজয়ের স্বাদ পায়নি কেবল দুটি দল। তাদের একটি ইংল্যান্ড। তাতেই সুস্পষ্ট যে গ্যারেথ সাউথগেটের খেলোয়াড়দের শিরোপা-ক্ষুধাটা এবার কতটা তীব্র! শিরোপার স্বপ্নে বিভোর ইংল্যান্ড আজই মাঠে নামছে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ আফ্রিকার হট ফেভারিট সেনেগাল।
যারা ২০ বছর পর স্বপ্নের বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে খেলছে এবার। তাও আবার দলের সেরা তারকা সাদিও মানেকে ছাড়াই চমকপ্রদ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে গ্রুপ পর্বের বাধা অতিক্রম করে আলিয়ু সিজের দল। এই সেনেগালের বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়ার আগে তাই বাড়তি সতর্ক ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল ইংল্যান্ড। এরপর স্বপ্নের এই ট্রফিতে চুমো আঁকা হয়নি আর। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে এই দলটার প্রতি দেশের ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা ছিল দারুণ।
শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলে আশাও জাগিয়েছিল পিকফোর্ড-হ্যারি কেনরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালেই জয়রথ থেমে যায় থ্রি-লায়ন্সদের। এরপর ইউরোতেও নিজেদের পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে তারা। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়ে ফাইনালে ইতালির কাছে হেরে যায় গ্যারেথ সাউথগেটের দল। টানা দুটি মেজর টুর্নামেন্টে শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হওয়া ইংল্যান্ড দলটির ওপর এবার কাতার বিশ্বকাপেও ভরসা রাখছে ফুটবলপ্রেমীরা। শুরুটাও ঠিক তেমনভাবেই করেছিল কেন-স্টার্লিং-সাকারা। ইরানের বিপক্ষে ৬-২ গোলের উড়ন্ত সূচনার মাধ্যমে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করলেও শেষ ম্যাচে ওয়েলসের বিপক্ষে আবারও দারুণভাবে ফিরে সাউথগেটের দল।
এদিকে সেনেগালও বড় স্বপ্ন নিয়ে কাতার বিশ্বকাপের মিশন শুরু করে এবার। এই নিয়ে তিনবার বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করছে আফ্রিকার দলটি। যদিওবা শুরুর আগেই বড় ধাক্কা খায় তাদের দলের সেরা তারকা সাদিও মানেকে হারিয়ে। কিন্তু তথাপি তাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা ছিল আফ্রিকার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সাফল্য। সেই সাফল্যের ধারাবাহিতা ধরে রেখেছে কাতারেও। নিজেদের লক্ষ্য ঠিকই অর্জন করে ফেলেছে। নক আউট পর্ব খেলার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণের পর এবার আরও এগিয়ে যাওয়ার হাতছানি তাদের সামনে। ২০২২ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস গড়েছিল তারা।
এবারও সেই পথে হাঁটছে আলিয়ু সিসের দল। অথচ ২-০ গোলে ডাচদের কাছে হেরে মিশন শুরু করেছিল আফ্রিকান দেশটি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে কাতারকে হারিয়েই পূর্ণ তিন পয়েন্ট লাভের পাশাপাশি শেষ ষোলোর টিকিট কাটার স্বপ্নটাও বড় হয় তাদের। শেষ ম্যাচে লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরকেও হারিয়ে দেয় সেনেগাল। এই ম্যাচে জয়সূচক গোল করে নায়কের ভূমিকায় আবির্ভূত হন দলটির অধিনায়ক কালিদু কুলিবালি। ২০০২ বিশ^কাপে দুর্দান্ত খেলা সেনেগাল দলের দুই সদস্য আলিয়ু সিজে এবং এল হাডজি ডিউফ এবার সেনেগালের কোচ ও সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দুজনেরই লক্ষ্য ইংল্যান্ডকে হঠিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা।
২০১৫ সালে সেনেগালের দায়িত্ব নেওয়ার পর দলটিকে দারুণভাবে গুচিয়েছেন আলিয়ু সিজে। তার অধীনে প্রথমবারের মতো আফ্রিকান নেশন্স কাপের শিরোপাও ঘরে তুলে সেনেগাল। তবে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ইতিহাস অবশ্য পক্ষে নেই সেনেগালের। কেননা ইউরোপীয়ান কোন দলের বিপক্ষে বিশ^কাপের নক আউট পর্বে ৯ ম্যাচের আটটিতেই যে হেরেছে সেনেগাল। একমাত্র জয়টি ছিল সুইডেনের বিপক্ষে।