Image default
খেলা

ম্যানচেস্টার সিটি বনাম চেলসি: যেসব বিষয় গড়ে দেবে ম্যাচের ভাগ্য

পেপ গার্দিওলা আজ নামছেন নিজের সবচেয়ে বড় অপূর্ণতা ঘোচানোর লক্ষ্য নিয়ে, পোর্তোর এস্তাদিও দি দ্রাগাওতে। কী সেই অপূর্ণতা? বার্সেলোনা ছাড়ার পর থেকেই বছরের পর বছর ধরে একটা ‘দুর্নাম’ বয়ে বেড়াচ্ছেন এই কোচ। বার্সেলোনার সেই স্বর্ণালি সময়ের তারকারা, বিশেষ করে লিওনেল মেসি না থাকলে গার্দিওলা ইউরোপীয় পর্যায়ে সফল হতে পারেন না, এক দশক ধরে এই দায় বয়ে বেড়াচ্ছেন কাতালান কোচ। এই সময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা তো দূর, বায়ার্ন মিউনিখ বা ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে একবার ফাইনালেও উঠতে পারেননি।

ওদিকে দায় আছে টমাস টুখেলেরও। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে এই কোচ গত বছরেই উঠেছিলেন, কিন্তু উদ্যমী বায়ার্নের কাছে পেরে ওঠেনি তাঁর পিএসজি। এক শিরোপা টানা দুবার অবশ্যই হারতে চাইবেন না! আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি ম্যানচেস্টার সিটি ও চেলসি। এ ম্যাচের আগে টুখেল একটু হলে বুকে বল পাবেন। চেলসির দায়িত্ব নেওয়ার পর এই জার্মান কোচ গার্দিওলার সিটির মুখোমুখি হয়েছেন দুবার। জিতেছেন দুবারই। এফএ কাপের সেমিফাইনালে গার্দিওলার দল হেরেছে ১-০ গোলে, ওদিকে কিছুদিন আগেই হওয়া লিগ ম্যাচে চেলসি জিতেছে ২-১ গোলে।

ভাবা স্বাভাবিক, গার্দিওলার সিটিকে কীভাবে হারানো যায়, সে টোটকা ভালোই জানা আছে সাবেক পিএসজি কোচের। একনজরে দেখে নেওয়া যাক দুদলের কৌশলগত কিছু বিষয়ের কথা, যা গড়ে দিতে পারে ফাইনালের ভাগ্য।

চেলসির প্রেসিং ও প্রতি-আক্রমণ

সিটির বিপক্ষে যে দুই ম্যাচে জিতেছেন, প্রতিবার ৩-৪-২-১ ছকে দলকে খেলিয়েছেন চেলসি কোচ। পিএসজি বা ডর্টমুন্ডের কোচ হিসেবেও নিয়মিত ছক পরিবর্তন করতেন টুখেল। চেলসিতে এসে সে অভ্যাস একটু হলেও কমেছে। থিয়াগো সিলভার নেতৃত্বে দুপাশে দুজন সেন্টারব্যাক, দুই উইংব্যাকের মধ্যে দুজন আদর্শ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, ওপরে স্ট্রাইকারের দুপাশে দুজন ইনসাইড ফরোয়ার্ড। ব্যস, আপাতত এই ছক থেকে খুব বেশি নড়েননি টুখেল। সিটির বিপক্ষে আজও চেলসি যে এই ছকেই খেলবে, সেটা মোটামুটি বলে দেওয়া যায়।

চেলসির ৩-৪-২-১ ছকের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, মিডফিল্ডার আর আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা অনেক বেশি প্রেস করেন। প্রয়োজনে আক্রমণভাগে থাকা ভেরনার, পুলিসিকরা দুপাশে সরে গিয়ে মাঝমাঠের কান্তে আর মাউন্টকে ওপরে ওঠার সুযোগ করে দেন। সিটির বিপক্ষে এই কৌশলটা বড্ড দরকারি।

যে দুই ম্যাচে টুখেলের চেলসি সিটিকে হারিয়েছে, ওই দুই ম্যাচে টুখেলের কৌশলের একটা বিশেষ দিক চোখে পড়েছে। গার্দিওলার রক্ষণভাগ বেশ ‘হাই লাইনে’ উঠে প্রেস করে। অর্থাৎ নিজেরা যখন বলের দখলে থাকে, সিটির গোটা রক্ষণভাগ বেশ ওপরে উঠে আসে। ফলে গোলকিপার এদেরসনের সঙ্গে সিটি রক্ষণভাগের দূরত্ব বেড়ে যায়, দিয়াসদের পেছনে জায়গা অনেক ফাঁকা পড়ে থাকে। আগের দুই ম্যাচে দ্রুত প্রতি-আক্রমণের মাধ্যমে টুখেল ওই জায়গাটার সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছেন।

ভেরনারের গতি ও মুভমেন্ট

সিটি রক্ষণের ফেলে রাখা জায়গার সদ্ব্যবহার করতে চাইলে গতির বিকল্প নেই। যে কারণে ট্যামি আব্রাহাম বা অলিভিয়ের জিরু নন, স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবেন ভেরনার। হাস্যকরভাবে এ মৌসুমে গোল হাতছাড়া করলেও কোচের কৌশলের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য অন্য যেকোনো স্ট্রাইকারের চেয়ে ভেরনার কার্যকর। একই কারণে হয়তো রাইট উইঙ্গার/রাইট ফরোয়ার্ড হিসেবে হাকিম জিয়াশের বদলে খেলাতে পারেন পুলিসিককে। এই কৌশলে নিখুঁত পাস দিতে পারেন এমন নয়, বরং প্রতি-আক্রমণে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন এমন খেলোয়াড় দরকার। যদিও লিগে আর্সেনাল ও অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ দুটিতে পুলিসিক ভালো খেলেননি।

জর্জিনিও-রুডিগারের ‘লং বল’

সিটি রক্ষণভাগের পেছনের জায়গা ব্যবহার করার জন্য চেলসি পেছন থেকে উড়ন্ত পাস দেওয়ার চেষ্টা করবে। মাঝমাঠ থেকে এই কাজ করবেন জর্জিনিও, রক্ষণভাগ থেকে আন্তোনিও রুডিগারও থাকবেন। চেলসিকে খেয়াল রাখতে হবে, জর্জিনিও যেন সিটির প্রেসিংয়ে ভেঙে না পড়েন। কারণ কার্যকর প্রেসের বিপক্ষে জর্জিনিও প্রায়ই নিষ্প্রভ থাকেন, আর এ ম্যাচে নিষ্প্রভ থাকলে ভেরনার, মাউন্ট বা পুলিসিকের (বা জিয়াশ) দিকে লক্ষ্য করে নিখুঁত লং বল পাঠাতে পারবেন না। আর সে ক্ষেত্রে চেলসির অন্যতম বড় এক কৌশল মার খাবে।

গার্দিওলার ‘অনিশ্চিত’ ছক

টুখেলের ছক মোটামুটি অনুমান করা গেলেও, গার্দিওলার ক্ষেত্রে সে কথা বলার জো নেই। এর আগে চেলসির বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলতে নেমে একবার দলকে খেলিয়েছেন ৪-২-৩-১ ছকে, আরেকবার ৫-১-২-২ ছকে। মূল একাদশে এদেরসন, কেভিন ডি ব্রুইনা আর রুবেন দিয়াস ছাড়া কারোর খেলাই নিশ্চিত নয়।

তোরেস-স্টার্লিংয়ের গতি, না মাহরেজ-ফোডেনের নিয়ন্ত্রণ?

এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ১১ ম্যাচ খেলে নয়টাতেই গোল খায়নি চেলসি। শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগ বলেই নয়, টুখেল কোচ হওয়ার পর থেকেই চেলসির রক্ষণ বদলে গেছে। চেলসির অটুট রক্ষণ ভাঙার জন্য গার্দিওলার অস্ত্র দুটি—হয় গতির খেলায় সিলভা-রুডিগারদের হারাতে হবে, নয় বল পায়ে দক্ষ এমন দুজনকে উইঙ্গার হিসেবে খেলাতে হবে, যাঁরা ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। প্রথম কাজের জন্য স্প্যানিশ ফেরান তোরেস আর ইংলিশ রাহিম স্টার্লিং কার্যকর, ওদিকে দ্বিতীয় কাজে গার্দিওলাকে সাহায্য করেছেন ফিল ফোডেন আর রিয়াদ মাহরেজ।

দুই ইংলিশ তরুণ

খেলোয়াড় টানতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালা চেলসি ও সিটির এই ম্যাচে সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস হতে পারেন এমন দুজন, যাঁদের দলে আনতে কানাকড়িও খরচ হয়নি। চেলসির জেসন মাউন্ট আর ফিল ফোডেনের বুদ্ধিদীপ্ত প্রেসিং, মুভমেন্ট, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকার চেষ্টা ও একাধিক ভূমিকায় খেলতে পারার ক্ষমতা আছে। অতীতের যেকোনো ইংলিশ মিডফিল্ডারের চেয়ে এটা তাঁদের অনন্য করে দিচ্ছে। টুখেল ও গার্দিওলার অন্যতম প্রধান অস্ত্র দুজন।

স্বমহিমায় কান্তে

ল্যাম্পার্ডের কপাল খারাপ, যখন চেলসির কোচ ছিলেন—পূর্ণ ফিট এনগোলো কান্তেকে সেভাবে পাননি। টুখেল পূর্ণ ফিট কান্তেকে আরও বেশি কার্যকর করে গড়ে তুলেছেন। ল্যাম্পার্ডের অধীনে কান্তের ভূমিকা একটু বদলানো হয়েছিল, রক্ষণের ওপর বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার কাজে লাগানো হতো তাঁকে। বল কেড়ে নিয়ে দ্রুত নিজেদের প্রতি-আক্রমণ শুরু করে দিতে পারেন কান্তে—আবার সে লাইসেন্স ফিরিয়ে দিয়েছেন টুখেল।

রদ্রি, না ফার্নান্দিনিও?

৩৬ বছর বয়সী কোনো ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে খেলানোর সাহস দেখানোটা একটু বাড়াবাড়ি। কিন্তু নামটা যখন ফার্নান্দিনিও—গার্দিওলা নিশ্চিন্তে এই ব্রাজিলিয়ান রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারকে খেলাতেই পারেন। যেকোনো প্রতি-আক্রমণ আগে থেকে আঁচ করে ভেস্তে দেওয়ার কাজটা এই বয়সেও রদ্রির চেয়ে ফার্নান্দিনিও ভালো করেন। পারেন প্রতিপক্ষকে এমনভাবে ফাউল করতে, যাতে হলুদ বা লাল কার্ড দেখতে না হয়।

‘ফলস নাইন’-এ কে?

পুরো মৌসুম আদর্শ স্ট্রাইকার ছাড়াই দলকে খেলিয়েছেন গার্দিওলা। সের্হিও আগুয়েরো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস বেশি থেকেছেন বেঞ্চে। কেভিন ডি ব্রুইনা থেকে শুরু করে মাহরেজ, ফোডেন, তোরেস, বের্নার্দো সিলভা—প্রত্যেককেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়েছেন গার্দিওলা। স্প্যানিশ কোচের ফলস নাইন খেলানোর এই প্রবণতা সিটির আক্রমণভাগকে আরও বেশি অননুমেয় করে তোলে। কে কখন কোথায় হাজির হন, আগে থেকে বোঝা যায় না।

তবে যিনিই খেলুন না কেন, তাঁর ভূমিকা যে শুধু গোল করায়ই আটকে থাকবে না, সেটা নিশ্চিত। এ কারণে সিটিতে স্ট্রাইকার হিসেবে যে বা যাঁরা খেলেন তাঁরা নন, বরং সবচেয়ে বেশি গোল দিয়েছেন মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্দোয়ান। স্ট্রাইকার নিচে নেমে খেলা গড়ে দিচ্ছেন, না হয় প্রেস করছেন, মাঝমাঠের কোনো এক খেলোয়াড় সে ফাঁকা জায়গায় উঠে এসে গোল করছেন।

দুর্দান্ত দুই ফুটবল মস্তিষ্কের লড়াইয়ের অপেক্ষা এখন। যেখানে গার্দিওলা অপেক্ষায় আছেন মেসিহীন দল নিয়ে সফল হওয়ার, ওদিকে টুখেলের অপেক্ষা প্রথমবারের মতো ইউরোপসেরা হওয়ার।

Related posts

পাবজি তে UC ও রয়েল পাস ফ্রি | PUBG MOBILE

News Desk

এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছে ভারত!

News Desk

বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলে ইংল্যান্ড পাবে ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড!

News Desk

Leave a Comment